চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী আমেজ। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন মিলিয়ে ইতোমধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। এখন চলছে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের কাজ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চাকসু, হল সংসদ ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে মোট এক হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা পড়েছে ৯৩১টি। এর মধ্যে চাকসুতে ৪২৯ জন এবং হল ও হোস্টেল সংসদের জন্য ৫০২ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ছেলেদের হল, একটি হোস্টেল ও ৫টি মেয়েদের হলে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে সোহরাওয়ার্দী হলে- ১৬টি পদের বিপরীতে ৫৩ জন। সবচেয়ে কম প্রার্থী রয়েছেন শহীদ আবদুর রব হলে- যেখানে জমা পড়েছে ৩১টি মনোনয়ন। মেয়েদের হলে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩১ জন এবং সবচেয়ে কম নবাব ফয়জুন্নেছা হলে ১৭ জন।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই মূল চ্যালেঞ্জ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হাজার ৫১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৯,০০০ শিক্ষার্থী অনাবাসিক। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলের বাইরে বসবাস করেন। শহরে থাকা এসব শিক্ষার্থীর ভোট নিশ্চিত করাই প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ বাস সার্ভিস, শাটল ট্রেনের সময়সূচি বাড়ানো কিংবা শহরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি উঠেছে ইতোমধ্যেই। বিশেষ করে হল সংসদের প্রার্থীরা সমস্যায় পড়েছেন বেশি। হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো, তাদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং ভোট নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক প্রার্থী অনলাইন প্রচারণার ওপর নির্ভর করছেন।
দীর্ঘ ছুটির প্রভাব : শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ১২ দিনের ছুটি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা ও লক্ষ্মীপূজা মিলিয়ে প্রচারণার সময় আরও কমে যাবে। এতে প্রচারণায় ভাটা পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন প্রার্থীরা।
অনলাইন প্রচারণায় ঝুঁকছেন প্রার্থীরা : শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি সীমিত থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, প্রচারমূলক ভিডিও ও ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে অনলাইন প্রচারণা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
চাকসু ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি। এখন পরীক্ষার সময়, শিক্ষার্থীরা অনাবাসিক, তার ওপর দীর্ঘ ছুটি- সব মিলিয়ে প্রচারণায় বড় প্রভাব পড়বে। আমরা শাটল সার্ভিস, শহরে উপস্থিতি বাড়ানো এবং অনলাইনে সর্বোচ্চভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
এএফ রহমান হল সংসদের দপ্তর সম্পাদক পদপ্রার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনলাইনে কনটেন্ট তৈরিতেই এখন বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। ছুটি শুরু হলে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বাড়ি চলে যাবেন, তখন প্রচারণা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, অনাবাসিক ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পূজার ছুটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করব, তবে যতদিন ক্যাম্পাস খোলা থাকবে ততদিন সরাসরি যোগাযোগ চালিয়ে যাব।”
সময় সংকটে প্রার্থীরা : ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু তার পরপরই শুরু হবে দীর্ঘ ছুটি। ফলে সীমিত সময়েই প্রার্থীদের প্রচারণা সেরে নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, আমরা দ্রুতই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করব। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রচারণা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ঠান্ডা মাথায় সবকিছু করা সম্ভব। প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই সব আয়োজন করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ