বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে অংশীজনদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। সংলাপটি আগামী মাসেই (অক্টোবরে) অনুষ্ঠিত হতে পারে। জানা গেছে, এলডিসি উত্তরণের অগ্রগতি জানতে চেয়ে গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের সিডিপির চেয়ার হোসে অ্যান্টোনিও ওকাম্পো বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর কীভাবে এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে সে বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে জবাবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটির (সিডিপি) জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সংলাপ আহ্বান করবেন। সংলাপের মূল প্রতিপাদ্য হবে, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে পারে কি না? পারলে কীভাবে?
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করব কি না এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এলডিসি উত্তরণের পর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুরক্ষা দেবে সরকার। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এমন বার্তাই দেবেন। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে প্রতিবন্ধকতা দূর করার কাজ করছে সরকার। আমরা জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ খাতের বিনিয়োগে বাধা দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে উত্তরণের পর কোনো ধাক্কা এলে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়।
উত্তরণ পেছানোকে কঠিন উল্লেখ করে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ হয়তো অন্য দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। যেহেতু সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য শক্তিশালী যুক্তি নেই। জাহাজ নির্মাণ খাতে এলসি (ঋণপত্র) খোলা এবং ওষুধে রাসায়নিক উপাদান এপিআই আমদানির সমস্যা সরকারের বিবেচনায় আছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় আটকে আছে, এটিকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে হবে। জাতিসংঘ বলেছে, এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের পর তিন বছর বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ছাড়া ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোও চাইবে না বাংলাদেশ উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে জয়ী হোক।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) ড. আবদুর রাজ্জাক জাতীয় সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, দুই মাস আগে এলডিসি বিশেষজ্ঞ দল সরকারের কাছে এ সুপারিশ করেছিল। ব্যবসায়ীরা হয়তো বুঝতে পারবেন সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকারের করণীয় নিয়ে যেসব বিভ্রান্তি আছে তা আলোচনা মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ পেছানোর আবেদন করলেও জি-৭ দেশ ও কিছু দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন নাও করতে পারে। কারণ এখানে ভূ-রাজনৈতিক বিষয় আছে। উত্তরণের পর শ্রম আইন সংস্কার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য তদবির, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধণাগার (সিইটিপি) এবং জ্বালানিসংকট সমাধান হবে প্রধান করণীয়।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, রপ্তানিকারকরা চান সরকার সিডিপিকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিক বাংলাদেশের দুর্বল বন্দর ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির ফলে উত্তরণের সময় পেছানো যেতে পারে।
এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, সরকারকে উত্তরণের সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ রপ্তানিকারক, ওষুধ ও কৃষি খাতসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত এতে জড়িত। এজন্য সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রকৃত প্রস্তুতি না নিলে উত্তরণের পর বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় এলডিসি থেকে নির্দিষ্ট সময়ে উত্তরণে একটি সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।