পৃথিবীর সবচেয়ে সংগঠিত প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পিঁপড়া। আকারে ছোট হলেও তাদের সমাজবদ্ধতা, একতাবদ্ধ কাজ করার ক্ষমতা আর পরিশ্রম পৃথিবীর অন্য সব প্রাণীর জন্য এক বিশাল শিক্ষা। পৃথিবীতে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি প্রজাতির পিঁপড়া আছে। ধারণা করা হয়, যদি সব পিঁপড়া একত্রে ওজন করা হয়, তবে তা মানুষের মোট ওজনের কাছাকাছি বা তার থেকেও বেশি হতে পারে।
পিঁপড়াদের সমাজ আসলে এক ধরনের সেনাবাহিনী বা সাম্রাজ্যের মতো। তারা কলোনি করে একত্রে বাস করে। প্রতিটি কলোনিতে থাকে রানি, সৈনিক ও শ্রমিক পিঁপড়া। রানির প্রধান কাজ ডিম পাড়া, আর শ্রমিক ও সৈনিকরা পুরো কলোনির যত্ন নেয়। শ্রমিকরা খাবার সংগ্রহ করে, বাসা বানায় ও ছোট লার্ভাদের খাওয়ায়। সৈনিকরা শত্রুর আক্রমণ থেকে কলোনিকে রক্ষা করে। তাদের এই কাজের ভাগাভাগি এবং শৃঙ্খলা এক কথায় অনন্য। এজন্য তাদের সামাজিক জীব বলা হয়।
পিঁপড়ারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে, তবে মানুষের মতো শব্দে নয়। তারা রাসায়নিক পদার্থ বা ফেরোমোন ব্যবহার করে যোগাযোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পিঁপড়া যদি খাবারের সন্ধান পায়, তবে সে ফেরোমোনের গন্ধ ছড়িয়ে দেয়, আর সেই পথ অনুসরণ করে শত শত পিঁপড়া খাবারের কাছে পৌঁছে যায়। এতে একসঙ্গে বিশাল সেনাবাহিনীর মতো দল গড়ে উঠে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো তাদের পরিশ্রমের ক্ষমতা। একটি পিঁপড়া নিজের শরীরের ওজনের প্রায় ২০ গুণ পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে যদি তাই হতো, তবে একজন মানুষ একাই একটা ট্রাক বা হাতির সমান ভার তুলতে পারত!
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়াদের মধ্যে আর্মি অ্যান্ট বা সেনা পিঁপড়া সবচেয়ে ভয়ংকর। তারা কখনো স্থায়ী বাসা বানায় না, বরং একত্রে চলাফেরা করে বিশাল ঝাঁকের মতো। পথে যে কোনো ছোট প্রাণী তাদের আক্রমণের মুখে পড়লে আর বাঁচে না। তাদের আক্রমণ এতটাই সংগঠিত যে, বড় বড় প্রাণীও তাদের ভয় পায়।
মানুষের ইতিহাসেও পিঁপড়া এক প্রতীক। পরিশ্রম, শৃঙ্খলা আর দলগত শক্তির জন্য প্রাচীনকাল থেকে পিঁপড়াকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে লোককথায়ও পিঁপড়ার কথা বারবার উঠে এসেছে। আসলে পিঁপড়ার সেনাবাহিনী আমাদের শেখায়, আকারে ছোট হলেই যে শক্তি কম হবে, তা নয়। একতা, পরিকল্পনা আর কঠোর পরিশ্রমে ছোট্ট প্রাণীরাও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তুলতে পারে।
লেখক : পরিবেশ-জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়