রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে হাজারীবাগ ও তেজগাঁও থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছিল।
গতকাল এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে হাজারীবাগ থানার সিকদার পেট্রোল পাম্পের সামনে বেড়িবাঁধ রোডে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নেন। খবর পেয়ে হাজারীবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে আওয়ামী লীগের স্লোগানসংবলিত ব্যানারসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
এদিকে একই দিন দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলানগর থানার ইন্দিরা রোড থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার ১২ জন হলেন-গাজীপুর জেলার কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস এম আশরাফুল আলম আসকর, ঢাকা লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের কর্মী মো. নুর ইসলাম, ঢাকা চকবাজার থানা যুবলীগের কর্মী সৈয়দ বাদশা মিয়া, হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের কর্মী মো. জাহিদ হাসান হৃদয়, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের কর্মী সাব্বির হোসেন, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের কর্মী মো. বিল্লাল হোসেন, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের কর্মী মো. মিলন মৃধা, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের কর্মী মো. আমির হোসেন, কামরাঙ্গীরচর থানা যুবলীগের কর্মী মানিক দাস, কামরাঙ্গীরচর থানা যুবলীগের কর্মী মো. শ্রাবণ আহমেদ ইভান, হাজারীবাগ থানা যুবলীগের কর্মী মো. মুসফিকুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা যুবলীগের কর্মী মো. ফরহাদ হোসেন মাতুব্বর।
এদিকে সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৮৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১ হাজার ২২৫ জন এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬২৪ জন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে একটি একনলা বন্দুক, এক রাউন্ড কার্তুজ, দুটি দেশীয় তৈরি এলজি, একটি কুড়াল, একটি লোহার তৈরি মদা ও একটি কার্তুজের খোসা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের বিশেষ এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন।
এ ছাড়া আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারা দেশে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোর, প্রতারক, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং মাদকাসক্ত রয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, একটি ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ ও সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, জাল এনআইডি, ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার আইডি কার্ড, জাল ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, রুপা, মোবাইলফোনসহ বিভিন্ন চোরাই মালামাল ও অর্থ উদ্ধার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশব্যাপী পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে যে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।