মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানবিরোধী নীতির জেরে এবার বিপাকে পড়েছে ভারত। গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে শুধু বাণিজ্যিক ক্ষতিই নয় কৌশলগত দিক থেকেও ভারত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৩ সালেই ভারত এই বন্দর উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ১৩ মে তেহরানের সঙ্গে ১০ বছরের একটি চুক্তি হয়, যেখানে স্থির হয় যে ইরানের বন্দর ও নৌ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে চাবাহার বন্দর পরিচালনা করবে ভারত।
এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত জলপথে পশ্চিম এশিয়া, রাশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চাইছে। এর পাশাপাশি, চাবাহার বন্দরের মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরেই পাকিস্তানের গদর বন্দর অবস্থিত, যা চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদি ভারত চাবাহার বন্দরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, তাহলে আরব সাগরে চীনের প্রভাব আরও বেড়ে যেতে পারে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি।
আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামো দুর্বল করতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস চাবাহার বন্দর ব্যবহারকারী দেশগুলোর ওপর নতুন করে জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। এর ফলে ভারতসহ অন্য দেশগুলোকে এই বন্দর ব্যবহার করলে আমেরিকাকে জরিমানা দিতে হবে।
আমেরিকার বিদেশ দফতর জানিয়েছে, ইরানের অবৈধ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ভেঙে দেওয়াই এই পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য। তবে এই পদক্ষেপের ফলে চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার নিয়ে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে। এতে এই প্রকল্পে যুক্ত ভারতীয় সংস্থাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত জুন মাসে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। আমেরিকার দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা পেন্টাগনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই হামলার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার পরোক্ষ শিকার হচ্ছে ভারত।
এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। এখন ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে চাবাহার বন্দরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে ভারত। এর ফলে ভারতের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল