রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে গিয়ে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন রূপলাল (৪০) ও প্রদীপ (৩৫) নামে হরিদাস সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি। উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাটে শনিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রূপলাল ঘটনাস্থলে এবং গুরুতর আহত হয়ে তাঁর ভাগনিজামাই প্রদীপ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল সকালে মারা যান। রূপলাল উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙাপাড়ায় বসবাস করতেন।
তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। প্রদীপ মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান গ্রামের বাসিন্দা। রূপলালের স্ত্রী মালতী অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপলালের মেয়ে নূপুর এবার এসএসসি পাস করেছে। রবিবার তার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার কথা ছিল। বরপক্ষের জন্য সৈয়দপুর থেকে বাংলা মদ নিয়ে তাঁরা ফিরছিলেন। হরিদাস (মুচি) সম্প্রদায়ের রীতিনীতিতে বিয়ে বা কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে বাংলা মদ পরিবেশন সামাজিক প্রথা। তাই শনিবার রাতে রূপলাল ও প্রদীপ সৈয়দপুরের ভাটিখানা থেকে স্পিড ড্রিংকের বোতলে বাংলা মদ সংগ্রহ করে মূল সড়ক (বিশ্বরোড) এড়িয়ে ভ্যানযোগে গ্রামের ভিতরের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাটের ফরিদাবাদ মোড়ে বটতলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছালে কয়েক যুবক তাঁদের অনুসরণ করে ব্যাগে কী আছে জানতে চান এবং মদভর্তি ব্যাগটি কেড়ে নেন। এরপর তারা চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে কিছু না বুঝেই তাঁদের বেধড়ক মারধর শুরু করে। মারধরে রূপলাল ও প্রদীপের অবস্থা খারাপ হলে স্থানীয়রা তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বুড়িরহাট স্কুল মাঠে ফেলে রেখে যান। রূপলাল ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্রদীপকে পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করালে রবিবার ভোর ৪টার দিকে তাঁরও মৃত্যু হয়। তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।