আলো আর আধারের পার্থক্য স্পষ্ট। ইসলাম মানুষকে আলোর পথে চলতে বলে। অন্ধকার থেকে নিয়ে যেতে চায় জ্ঞানালোকের পথে। মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর রসুলের প্রতি প্রথম পাঠ হলো- ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে’ (সূরা আলাক-১-২)। পবিত্র কোরআনের এ বাণী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এতে জ্ঞানার্জনের পথে বান্দাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবীর বুকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এক মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে, আর তা হলো- একমাত্র তারই ইবাদত করা এবং গাইরুল্লাহর ইবাদতকে বর্জন করা। আল্লাহর ও গাইরুল্লাহর ইবাদতের মাঝে পার্থক্য জানতে হলে, অন্ধকার থেকে আলোকে পার্থক্য করতে হলে, হক ও বাতিলকে চিনতে হলে, হেদায়েত ও গোমরাহির মাঝে দূরত্ব বুঝতে হলে দীনি ইলম অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
মানুষ ইলম অর্জন করবে, সে অনুযায়ী আমল করবে এবং নিজেদের মাঝে ইলম প্রচার করবে এটাই আল্লাহর দাবি। আর এজন্যই আল্লাহ জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, ‘সুতরাং এমন কেন হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল থেকে এক একটি ছোট দল বের হবে যাতে তারা দীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের কাছে প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়। (তওবা ৯/১২২)।
মানুষ পৃথিবীতে আসে অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি, যা সে জানত না’ (আলাক-৯৬/৫)। ইলম বা জ্ঞান দ্বারা ভালো-মন্দ নির্ণয় করা যায়। এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সুতরাং আল্লাহ যার মঙ্গল চান এবং যার দ্বারা হকের বাস্তবায়ন সম্ভব তাকেই মহামূল্যবান জ্ঞান দান করে থাকেন। যেহেতু জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই এই জ্ঞান আল্লাহ যাকে চান তাকে দান করেন। তিনি বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।’ (বাকারাহ-২/২৬৯)। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দীনের জ্ঞান দান করেন।
ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নেয়ামত। যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?’ (জুমার ৩৯/৯)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?’ (রাদ ১৩/১৬)।
মহান আল্লাহ সম্পর্কে যারা সঠিক ধারণা রাখে এবং তাঁর শরয়ী বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে জানে এবং মেনে চলে তারাই প্রকৃত জ্ঞানী। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মূলত আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।’ (ফাতির ৩৫)।
ইলম অর্জনের মর্যাদা অত্যধিক। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদের জ্ঞান দান করেছেন তাদের উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)। ইলম অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেবেন। বর্তমান সমাজ প্রকৃত শিক্ষাকে ভুলে কুশিক্ষার দিকে ধাবমান। সন্তান পিতামাতাকে, পিতামাতা সন্তানকে, ছোট ভাই বড় ভাইকে, এক মুসলিম অপর মুসলিমকে অপমান-অপদস্ত করতে সামান্য পরিমাণ দ্বিধাবোধ করে না। মুসলিমরা পৃথিবীর আনাচেকানাচে প্রতিটি জায়গায় নিপীড়নের শিকার। পৃথিবীতে অশান্তির দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে। এর প্রকৃত কারণ প্রকৃত শিক্ষাকে ভুলে যাওয়া। তাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যদি প্রকৃত শিক্ষা কোরআন ও সহিহ সুন্নাহর আলোকে সমন্বয় করা হয় তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তাই আসুন! অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করে দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি এবং আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন-আমিন!
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ