মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ইরানের তেল পাচার চক্র ও হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি বিভাগ) এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ইরাকি-ব্রিটিশ নাগরিক সালিম আহমেদ সাঈদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ২০২০ সাল থেকে বিপুল পরিমাণ ইরানি তেল ইরাকি তেল হিসেবে উপস্থাপন করে বিশ্ববাজারে পাচার করে আসছে। ওই তেল কখনো সরাসরি, কখনো বা ইরাকি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে রপ্তানি করা হতো।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, "তেহরানের যে অর্থনৈতিক উৎসগুলো তাদের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে, সেগুলোকেই আমরা মূল লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছি। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানের রাজস্বের ওপর চাপ আরও বাড়ানো হবে।"
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি অর্থায়নের কারণে দেশটির ওপর অনেক আগেই একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ এই পদক্ষেপ তারই ধারাবাহিকতা।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সাল থেকে ইরাকজুড়ে একটি শক্তিশালী জ্বালানি চোরাচালান চক্র গড়ে উঠেছে, যা ইরান ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের জন্য বছরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার আয় নিশ্চিত করে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এমন এক সময়, যখন ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র 'ফোর্দু'। পেন্টাগনের দাবি, এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আসন্ন সপ্তাহে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পারমাণবিক ইস্যুতে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওস।
মার্কিন ট্রেজারি জানায়, সাঈদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো এবং সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলো ইরানি তেলকে ইরাকি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে তা ইরাকি তেল হিসেবে বাজারজাত করত। এসব তেল আমিরাত কিংবা ইরাকের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোতে পৌঁছানো হতো।
সাঈদ সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ‘ভিএস ট্যাঙ্কার্স’ নামে একটি কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, যদিও তিনি নিজের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানির কাগজে রাখেন না। এই প্রতিষ্ঠানটি আগে 'আল-ইরাকিয়া শিপিং সার্ভিসেস অ্যান্ড অয়েল ট্রেডিং (এআইএসএসওটি)' নামে পরিচিত ছিল। ট্রেজারি বলছে, ভিএস ট্যাঙ্কার্স ইরানি সরকার ও ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) পক্ষে তেল পাচারে যুক্ত ছিল—যাকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সব সম্পদ জব্দ করা হবে এবং আমেরিকান নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না।
ভিএস ট্যাঙ্কার্স যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা আইনি পথে জবাব দেবে। নিউইয়র্কে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস এখনো কোনো মন্তব্য দেয়নি।
এছাড়াও, একাধিক জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যেগুলো গোপনে ইরানি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হতো। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরানের তথাকথিত "ছায়া নৌবহর"-এর ওপর চাপ বাড়ানো হয়েছে।
এদিন হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘আল-কারদ আল-হাসান’–এর সঙ্গে যুক্ত একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রেজারি জানিয়েছে, এই কর্মকর্তারা গোপনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের লেনদেন পরিচালনা করেছেন, যা শেষপর্যন্ত হিজবুল্লাহর অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এসব লেনদেন ছিল জটিল ও ধোঁয়াটে—যার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থপ্রাপককে আড়াল করা হয়েছিল। সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজিম