ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মহান আল্লাহ রমজান মাসব্যাপী প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর জন্য রোজা পালন করাকে ফরজ ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পার (সুরা আল বাকারা ২ : আয়াত ১৮৩)।’ রোজা মানুষের কুরিপুগুলোকে সংযমী করে শুদ্ধভাবে এবাদতের পথ সৃষ্টি করে দেয়। শুদ্ধভাবে রোজা পালনের ফলে রোজাদার আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ ফজিলত লাভ করে থাকেন। সেগুলো হলো-
১. মহান আল্লাহ রোজাদারদের নিজেই পুরস্কৃত করবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার ১০ গুণ (সহীহ বুখারি ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪; হাদিস : ১৮৯৪)।’
২. হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন (আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব)। তিনি বলেন, তুমি রোজা রাখো, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই (ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত সুনানে নাসায়ী দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৭৩, হাদিস নং ২২২৩।’
৩. রোজাদারকে রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল হিসেবে রক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের মহান প্রতিপালক ইরশাদ করেছেন- রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দেব (মুসনাদে আহমদ ১১তম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১০, হাদিস নং ১৪৬০৪)।’
৪. মহান আল্লাহ রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউসের ব্যবস্থা করে পানি পান করাবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউস থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতীত অন্য কারও আগমন ঘটবে না (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ৮১১৫)।’
৫. রোজাদারগণের জন্য রোজা মহান আল্লাহর কাছে জান্নাতের সুপারিশ করবে। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে খাদ্য ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৬৬২৬)।’
৬. রোজাদারগণের প্রতি মহান আল্লাহ খুশি হয়ে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না (বোখারি শরিফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪, হাদিস নং ১৮৯৬)।’
৭. রোজাদারগণের জীবনের পূর্ববর্তী গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে (বোখারি শরিফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৭০, হাদিস নং ২০১৪)।’
৮. রোজাদারগণের রোজা থাকার ফলে মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মোহাম্মাদের জীবন, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময় (বোখারি শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৫)।’
৯. মহান আল্লাহ্ রোজাদারদের দোয়াসমূহকে কবুল করেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে, তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দোয়া কবুল হয়) (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫৩)।’
১০. রোজাদারগণ দুটি সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অধিক আনন্দ লাভের মুহূর্ত রয়েছে। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজাদারদের দুটি আনন্দের সময় আছে যে দুটি সময়ে তারা আনন্দিত হবে। একটি হলো, ইফতারের সময়। অপরটি হলো, আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (মুসলিম শরিফ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৩)। পরিশেষে মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা তিনি যেন দয়া করে আমাদের সঠিকভাবে রোজা পালনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে দেন।
♦ লেখক : সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, পিইউবি; ইসলামি গবেষক ও লেখক