পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের এক বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত ভারতের পলাতক ব্যবসায়ী নিরব মোদিকে অষ্টমবারের মতো জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। বিচারক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জামিন দিলে নিরব মোদি পালিয়ে যেতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের একটি হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার পলাতক ভারতীয় ব্যবসায়ী নিরব মোদির জামিন আবেদন অষ্টমবারের মতো খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারক ফোর্ডহ্যাম রায়ে বলেন, “জামিনে মুক্তি দিলে আবেদনকারী আত্মগোপনে চলে যেতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন—এমন আশঙ্কার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে।”
২০১৯ সালের মার্চে ভারতের অনুরোধে জারি করা প্রত্যার্পণ পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে নিরব মোদি যুক্তরাজ্যের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (PNB) কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
নিরব মোদির আইনজীবী এডওয়ার্ড ফিটজগেরাল্ড কেসি আদালতে বলেন, নিরব মোদি অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময় ধরে বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আটক রয়েছেন, যা অনান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে অসামঞ্জস্য। ভারতের মামলায় প্রধান ভূমিকা পালনকারী শেঠি-সহ সব সহ-অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন, অথচ নিরব মোদির জামিন বারবার নাকচ হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, নিরব মোদির পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, কারণ তার সব সম্পদ ফ্রিজ ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
“ক্রিশ্চিয়ান মিশেল, জগতার জোহাল ও লতিফার মামলাসহ বহু ঘটনায় দেখা গেছে—ভারত সরকারের ক্ষমতার পরিসর সীমাহীন। কেউ যদি ভাবে নিরব মোদি ভানুয়াতুতে গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবেন, তা সম্পূর্ণ হাস্যকর,” বলেন ফিটজগেরাল্ড। “ভারত হয় তাঁকে অপহরণ করবে, কিংবা হিট স্কোয়াড পাঠাবে বা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে তাঁকে ভারতে পাঠাতে বাধ্য করবে।”
তবে বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, “যদি ভারত সরকারের ক্ষমতা এতই সীমাহীন হয়, তাহলে তারা যুক্তরাজ্য থেকেই কেন তাঁকে নিয়ে যেতে পারছে না?” তিনি উল্লেখ করেন, নিরব মোদির নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তাকে ‘ওসমান ওয়ার্নিং’ দিয়েছে, যা যুক্তরাজ্যে কারও প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকলে দেওয়া হয়।
ফিটজগেরাল্ড আদালতে দাবি করেন, ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে ব্যক্তিগত বিমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভারতে আনা হয়েছিল, জগতার জোহাল রাস্তায় অপহৃত হয়েছিলেন, আর লতিফা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে ‘অপহৃত’ হন। এসব ঘটনা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিচারবহির্ভূত প্রতিশোধের’ আশঙ্কা আরও জোরালো করে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নিরব মোদির বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রভাবিত করার অভিযোগ ৭ বছর আগের এবং এরপর এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, যদিও কারাগারে তাঁর কাছে একটি ফোন রয়েছে।
“ছয় বছর জেলে থাকা একারনেই অনেক,” বলেন ফিটজগেরাল্ড। তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে একটি গোপন আইনি প্রক্রিয়া নিরব মোদির প্রত্যার্পণ বিলম্বিত করছে।
ভারত সরকারের পক্ষে আইনজীবী নিকোলাস হার্ন বলেন, যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধের ভয় সত্যিই থাকে, তবে তিনি কীভাবে স্বেচ্ছায় ভারতে ফিরতে রাজি হবেন?
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
বিডি প্রতিদিন/আশিক