বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় মাসব্যাপী বাল্যবিয়ে ও যৌতুক বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে রবিবার (১৮ মে) বসুন্ধরা শুভসংঘ আগৈলঝাড়া শাখার উদ্যোগে আগৈলঝাড়া শ্রীমতি মাতৃমঙ্গ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রচারণার উদ্ধোধন করা হয়েছে।
গোটা দেশের ন্যায় আগৈলঝাড়া উপজেলাটিও বাল্যবিয়ের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেনি। অসচেতনতার কারণে উপজেলা জুড়ে ভাইরাসের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে বাল্যবিয়ে। সেই সাথে আছে যৌতুকের মতো দুর্বিষহ অভিশাপ।
বসুন্ধরা শুভসংঘ আগৈলঝাড়া শাখার উপদেষ্টা এসএম ওমর আলী সানি বলেন, কমছেই না বাল্যবিয়ে, দেশের গ্রাম পর্যায়ে এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কিশোরীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। ১৫ ও ১৬ বছরের কম বয়সে যা মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, যৌতুক একটি অনৈতিক, অবিচারপূর্ণ ও অবমাননাকর প্রথা। এর বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা, আইন প্রয়োগ এবং নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মোর্শেদ সজীব বলেন, বাল্যবিয়ের ফলে কিশোরী মাতৃত্বের ঝুঁকি বাড়ে, যা প্রিম্যাচিউর জন্ম, নবজাতকের কম ওজন এবং মাতৃমৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এই কিশোরী মায়েরা শারীরিকভাবে পরিপূর্ণ না হওয়ায় তাদের স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হতে থাকে, বিশেষ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে। কারণ তাদের শরীর এবং হাড় এখনো বিকশিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে, যেমন জরায়ু ক্যান্সার ও অন্যান্য প্রজনন স্বাস্থ্য জটিলতা। বাল্যবিয়ের কারণে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। কিশোরী মায়েরা উদ্বেগ, ডিপ্রেশন এবং সামাজিক চাপের শিকার হন, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
এসময় বক্তারা বলেন, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পূজা মল্লিক। শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন অনুসারে তার জন্ম তারিখ ২০০৯ সালে ১৬ মার্চ। উপজেলার রাজিহার গ্রামের রঞ্জন মল্লিকের মেয়ে। তাকে তার পিতা ১০ মে রাতে বিবাহ দিচ্ছে একথা শুনে সহকারি কমিশনার (ভূমি) উম্মে ইমামা বানিন বিয়ে বন্ধকরে দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে ইমামা বানিন কনের পিতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সেই সঙ্গে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দেবে না মর্মে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। কিন্তু একদিন পরে ময়েকে স্বামীর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। বিয়ে রেজিস্ট্রি হলে এই সুযোগ পেতো না তারা। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ রেজিস্ট্রি করানোর উপর জোর দাবি পেশ করেছেন তারা।
এসময় বক্তব্য রাখেন, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি ডা. মো. মাহাবুবুল ইসলাম, উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মো. সাইফুল মৃধা, বসুন্ধরা শুভসংঘ আগৈলঝাড়া শাখার উপদেষ্টা এসএম ওমর আলী সানি, সহ সভাপতি আয়কর আইনজীবী সমিরন রায়, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আ.রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব খান, সদস্য মো. ইদ্রিস খান, আমির হামজা, জিলিয়ান বিশ্বাস, শান্তা হালদার, সুথী আক্তার ও কেয়া আক্তার প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/এএ