একটা বট আর একটা পাকুড় বৃক্ষের নাম দেয়া হয়েছে মানুষের নামে। তাদের বিয়ে দেয়া হবে। বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। ছাপানো হয়েছে বিয়ের কার্ড। বট পাকুড়ের এই বিয়েতে প্রায় দুই হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণও জানানো হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, পাশাপাশি বট—পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। তাই রীতি মেনে মহাধুমধামে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার জেলার আটোয়ারী উপজেলার ঝলঝলি গ্রামের গ্রাম—ঠাকুর প্রাঙ্গণে সকালেই শুরু হয়ে যায় বিয়ের উৎসব। সাজানো হয় গেট। বটগাছকে সাজানো হয় বর আর পাকুড় গাছকে সাজানো হয় কনে। ঢাক ঢোল বাদ্যের তালে তালে নাচতে নাচতে বরকনে পক্ষ হলুদের ডালা নিয়ে যাচ্ছেন মন্ডপে। নাচ গানের পাশাপাশি বিপুল আনন্দ উৎসাহ নিয়ে বিয়ের আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে ভ্যান, রিক্সা, মোটরবাইকে চড়ে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন আমন্ত্রিত বরযাত্রী এবং অতিথিরা।
এই বিয়েতে বট গাছের নাম দেয়া হয়েছে অক্ষয় কুমার ও পাকুড় গাছটির নাম দেয়া হয়েছে তিথী রানী। বট গাছের মা বাবা হয়ে অভিভাবক হয়েছেন ঝলঝলি ডারিমুণি গ্রামের শ্রীমান রমেশ চন্দ্র বর্মন ও শ্রীমতি পারুল রানী দম্পতি। পাকুড়ি গাছের বাবা— মা হিসেবে ছিলেন ঝলঝলী (উলারচাপ) গ্রামের শ্রীমান বাসুদেব বর্মন এবং শ্রীমতি সান্তনা রানী দম্পতি।
আয়োজকরা জানান প্রায় ১০ বছর ধরে একসাথে বড় হয়ে উঠছে এই দুই বৃক্ষ। বিয়ের দিন এলাকাবাসীর অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাক—ঢোল পিটিয়ে মানুষের বিয়ের মতোই বিয়ে দেয়া হয়েছে এই দুই বৃক্ষের। ছিল ঠাকুরপূজা, মঞ্চ, খাওয়া দাওয়ার বিশাল আয়োজন। এমন বিয়েতে অংশ নিয়ে খুশি অতিথিরা।
এসময় শ্রীমান রমেশ চন্দ্র বর্মন ও শ্রীমান বাসুদেব বর্মন বলেন, আমরা এই দুই গাছের অভিভাবক হয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দুই পরিবার আত্বীয়ের বন্ধনে জড়িয়ে পড়লাম। আশা করি এই বিয়ের আয়োজনের মধ্য দিয়ে সকলের মঙ্গল হবে। একই সাথে এই দুই পরিবারের অন্য সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, মানুষের বিয়ের মতই এই বিয়েকে ঘিরে অনেক আনন্দ করেছি আমরা। সব আয়োজন ছিল বিয়েকে ঘিরে। তবে প্রথমবারের মত এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। চিরকাল মনে থাকবে এই আনন্দ।
ঝলঝলী উলারচাপ গ্রাম ঠাকুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু শ্রী রমেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, বৃক্ষ দুটিকে চোখের সামনে বড় হতে দেখছি। দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছা ছিল গ্রামবাসীকে নিয়ে তাদের বিয়ের আয়োজন করবো। শাস্ত্র অনুযায়ী এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা অর্জন হবে। গ্রামের সকলেই এই বিয়েতে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। আনন্দ উৎসবও হয়েছে।
ঝলঝলী উলারচাপ গ্রামের ঠাকুর গূজা উদযাপন কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার অক্ষয় তিথীতে বট— পাকুড়ি বৃক্ষের এই বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল