দিলারা জামান
বাজেট-স্বল্পতা দেখিয়ে নির্মাতারা দিনদিন এই চরিত্র কাটছাঁট করছেন। আর অভিনয় না শিখে আসা কিছু শিল্পীকে নাটকে যুক্ত করা হচ্ছে। তারা কীভাবে দর্শক নজর কাড়বেন? ভালো কনটেন্ট নেই। একইরকম রোমান্টিক গল্প। নতুনদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে দায়সারাভাবে। ফলে ভালো নাটক দর্শক দেখতে পারছেন না। দর্শক নজর শুধু কি ভিউ দিয়ে কাউন্ট হয়? অপশন তো অনেক!
আমিরুল হক চৌধুরী
আমি কিন্তু এভাবে দেখি না। এ সমস্যার অনেক কারণ আছে। অনেক তরুণ আছেন তারা কিন্তু অনেক ডেডিকেটেড। কিন্তু তাদের ব্যাপারে চ্যানেল, এজেন্সি বা নাট্যসংশ্লিষ্টরা কতটুকু দায়বদ্ধ? নতুনদের আমরা সামাজিকভাবে লালন-পালন করতে পারছি না। আমি যখন নতুনদের সঙ্গে শুটিং করি, তখন তাদের মেধায় মুগ্ধ হই। তারা অনেক মেধাবী। তবে তাদের মেধাকে নাট্যসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছেন না। তারা অনেক বেশি সম্ভাবনাময়!
আবুল হায়াত
শিল্পের প্রতি যাদের ভালোবাসা, তারা কি নাটক বানাচ্ছেন? বানাচ্ছেন মিডিয়া ব্যবসায়ীরা। তারা কম টাকায় নাটক বানানোর চেষ্টা করেন। এসবই আসলে দর্শকদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা মাত্র! এখনকার নাটকে ভাঁড়ামি, দুই-তিনজন শিল্পীনির্ভর আর গল্প ছাড়া নাটক হচ্ছে। নতুনদের অভিনয় দক্ষতার বড়ই অভাব! ফলে তারা মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। মানহীন নাটক দিয়ে তারা কতটুকু দর্শক নজর কাড়বেন?
আজাদ আবুল কালাম
অতিমাত্রায় টিভি চ্যানেল হয়ে যাওয়ায় সময়ের অভাবে যত্ন নিয়ে নাটক নির্মাণ বা অভিনয়ের দক্ষতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর অতিরিক্ত নাটক নির্মাণ, নাটকের বাজেট হ্রাসসহ একাধিক কারণে নির্মাণ আর অভিনয়, দুইয়ের মানই কমেছে। নাটক আর অভিনয়ে গভীরতা কমে গেছে। নাটক হয়ে গেছে শুধুই কমেডি ও প্রেমকেন্দ্রিক। নতুনদের মেধা আছে, কিন্তু কাজে লাগানোর মতো সুযোগ কি আমরা তাদের দিতে পারছি?
ডলি জহুর
এখন তো নির্মাতা, প্রযোজক বা চ্যানেল মালিক একটা গৎবাঁধা নিয়মে কাজ করছেন। শিল্পীরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। টোটাল ক্ষেত্রটাই অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নাটক না হচ্ছে কমেডি, না হচ্ছে রোমান্টিক। নির্মাণে নেই বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। এজেন্সি আর চ্যানেল মালিকদের মর্জিমাফিক নির্মিত হচ্ছে নাটক। দক্ষ অভিনয়শিল্পী তৈরি হচ্ছে না। নতুনদের মেধা অনুযায়ী নাটকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু অভিনয়শিল্পী এর ব্যতিক্রম।
লাকী ইনাম
নতুন অনেক শিল্পীই অপেশাদার মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন। মানের দিকে চ্যানেল, নির্মাতা, প্রযোজক কিংবা এজেন্সির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রকৃত মেধা-মান দিয়ে নাটক এখন আর বানানো হচ্ছে না। দর্শক তাই নাটক দেখা থেকে বিমুখ হচ্ছে। অধিক টিভি চ্যানেল হয়ে যাওয়ায় সময়ের অভাবে যত্ন নিয়ে নাটক নির্মাণ করছেন না নির্মাতারা।
শহীদুজ্জামান সেলিম
টেলিভিশন নাটকে একজন অভিনয়শিল্পীর যে পরিমাণ অভিনয় দক্ষতা থাকা দরকার সেটার ঘাটতি রয়েছে। সব মাধ্যমের তুলনায় টেলিভিশন নাটকে অভিনয় হচ্ছে কঠিনতম জায়গা। টেলিভিশন নাটকের কনটেন্ট হতে হয় ক্রিসপি, চমকদার- যা সহজেই দর্শক কাড়তে পারবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে কি? এখন তো ফরমায়েশি নাটক নির্মিত হচ্ছে। চ্যানেল মালিক, এজেন্সি আর প্রযোজকদের তৎপরতায় কিছু ভুয়া নবাগত শিল্পী নাটকে চান্স পাচ্ছেন। অনিয়মতান্ত্রিকতার চরম লেভেলে পৌঁছে গেছি আমরা! এ কারণেই নতুনরা দর্শক নজর কাড়তে পারছেন না।
আফরোজা বানু
বাংলাদেশ টেলিভিশনে যখন কাজ করতাম, তখন একটা সিস্টেমের মধ্যে ছিলাম; সেই অনুযায়ী কাজ হতো। এখন তো ওপেন মার্কেট! ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর কাজ পাওয়া নির্ভর করে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। ‘পুরো সিস্টেমটাই এখন ভেঙে পড়েছে’। ক্ষেত্রই ঠিক নেই। নতুনদের অনেক মেধা আছে, কিন্তু তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। মানহীন নাটক দিয়ে নতুনরা কীভাবে দর্শক নজর কাড়তে সক্ষম হবে?
তৌকীর আহমেদ
শিল্পীদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই!
মানসম্পন্ন নাটক তেমন হচ্ছে কি? ভিউর পেছনে ছুটতে গিয়ে মানের দিকে কেউ খেয়াল করছে না। ভালো কনটেন্টের অভাব। অন্যদিকে শিল্পীদেরও
রয়েছে প্রস্তুতির অভাব। এটা অবশ্য ইন্ডাস্ট্রির
দোষ! তারা মেধাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছে না, সুযোগ করে দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রি যদি লাভের পেছনে দৌড়ায় তাহলে
এরকম তো হবেই!