সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় একটি ব্যক্তিগত ‘বন্দিশালা’র সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে ৫ মাস বন্দি থাকার পর নিজেদের চেষ্টায় মুক্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ বছর বয়সী এক নারী ও ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। অভিযোগে ওঠেছে, এখানে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে চাঁদা আদায় ও জমি লিখে নেওয়াসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হতো। এই ঘরের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে শতশত মানুষ সেটি দেখার জন্য ভিড় করছেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা বাড়িটি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনার জড়িত প্রধান ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে আব্দুল জুব্বার (৭৫) ও লক্ষ্মীবিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪৮)। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা মুক্ত হন। আটক পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া শিল্পী বেগম জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রায় ৬ মাস আগে তাকে অপহরণ করা হয়। এক মাস অন্যত্র রাখা হলেও ৫ মাস যাবত তাদের এই ঘরেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মাঝে মধ্যে তাদের শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হতো। তিনি আরো বলেন, পল্লী চিকিৎসক আরাফাত, শরীফ মেম্বার, কামরুল, হাফিজুল ও পান্নাসহ আরও তিনজন তাদের ওই ঘরে বন্দি করে রেখেছিল। তার সাথে আব্দুল জব্বার নামে আরো একজন বন্দি ছিলেন।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৮ নভেম্বর বিকেলে বাবা নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাবা ওই ঘর থেকে কৌশলে বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই ভবনের মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন সেখ। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ভবনের নিচের অংশে ৩/৪টি ছোট ছোট কক্ষ তৈরী করেছে পল্লীচিকিৎসক আরাফাত। তিনি ও তার কিছু লোকজন গভীর রাতে এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোকজন সুমন ও আরাফাতের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুণ নিয়ন্ত্রণ করেছে।
রায়গঞ্জ থানার ওসি মো: আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। বন্দিশালা কিনা এখনো ক্লিয়ার করতে পারছি না। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাজমুল ইসলাম আরাফাত নামে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা নিখোঁজ হওয়ার পরই থানায় পৃথক দুইটি জিডি করেছিলেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, ওই ঘরের বন্দিদশা থেকে দুইজন উদ্ধার হয়েছে। এঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল