ইসলামী পরিভাষার গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ হলো ‘তাওফিক’। সহজ ভাষায় বলতে গেলে তাওফিক হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সাহায্য ও অনুপ্রেরণা, যার মাধ্যমে বান্দা নেক কাজ করার সুযোগ ও ইচ্ছা পায় এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকে। বান্দার ইচ্ছা, ক্ষমতা ও কাজকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সঠিক পথে পরিচালিত করে দেওয়া।
তাওফিকের গুরুত্ব
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফিক পাওয়া ছাড়া কোনো বান্দাই দুনিয়া বা আখিরাতে সফল হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ কোরো না। আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই সে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেবে। আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকত, তাহলে তোমাদের কেউই কখনো পবিত্র হতে পারত না; কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২১)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, তাওফিক হলো, মহান আল্লাহর সেই অনুগ্রহ ও দয়া, যা মানুষকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করছে। আর মহান আল্লাহর এই সাহায্য যারা পেয়ে যায়, তারাই সফল। পবিত্র কোরআনে সেই সব ভাগ্যবান বান্দার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সে সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অর্জন করে।’ (সুরা : আ‘লা, আয়াত : ১৪)
আর তাওফিকের সর্বোচ্চ স্তর হলো, আল্লাহ বান্দার অন্তরে ঈমান ও আনুগত্যকে প্রিয় করে দেন এবং কুফর, পাপ ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দেন।
সাহাবিদের এই মর্যাদাই ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রাখো যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল রয়েছেন। সে যদি বেশির ভাগ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন।
তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭)
তাওফিক শ্রেষ্ঠ উপহার
তাওফিক এমন এক শ্রেষ্ঠ উপহার, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। মহান আল্লাহ দয়া করে যাকে চান, তাকেই দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই তুমি যাকে ভালোবাস তাকে হেদায়েত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৬)
এই আয়াত ওই সময় অবতীর্ণ হয়, যখন নবী (সা.)-এর হিতাকাঙ্ক্ষী চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে। তখন তিনি চেষ্টা করলেন যাতে চাচা একবার নিজ মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাণী উচ্চারণ করুক, যাতে পরকালে আল্লাহর সামনে তার ক্ষমার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু সেখানে কুরাইশ নেতাদের উপস্থিতির কারণে আবু তালেব ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত থাকে এবং কুফরের ওপরই তার মৃত্যু হয়। নবী (সা.)-এর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। এই সময় মহান আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করে স্পষ্ট করে দিলেন যে ‘তোমার কাজ কেবলমাত্র পৌঁছিয়ে দেওয়া ও আহবান করা। আর হেদায়েত দান করা আমার কাজ। হেদায়েত সেই ব্যক্তিই লাভ করে থাকে, যাকে আমি হেদায়েত দান করি। তুমি যাকে হেদায়েতের ওপর দেখতে পছন্দ করো, সে হেদায়েত পায় না।’
অর্থাৎ আল্লাহ কাউকে দয়া করে হেদায়েত লাভের তাওফিক না দিলে, তার পক্ষে সুপথ প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়, অন্য কারো পক্ষেও তাকে সুপথপ্রাপ্ত করা সম্ভব নয়। তবে যেহেতু আল্লাহ আমাদের ওপর দ্বিনের দাওয়াত দেওয়া ও দ্বিনের ওপর অবিচল থাকা আবশ্যক করেছেন, তাই আমাদের জায়গা থেকে দাওয়াত দেওয়া ও নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। সর্বদা আল্লাহর কাছেই হেদায়েতপ্রাপ্ত হওয়ার তাওফিক চাইতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুপথে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন