জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। অনতিবিলম্বে এ দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার চলাকালীন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।’ গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এনসিপি ঢাকা মহানগর এই সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ বিচার এবং সংস্কারের দাবি নিয়েই রাস্তায় নেমে এসেছিল। গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল- জুলাই গণ অভ্যুত্থানসহ বিগত ১৬ বছরের সব ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আমাদেরকে রাজপথে নামতে হচ্ছে। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী দল। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা নিয়ে আর কোনো আলোচনার প্রশ্নই নেই। অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন সব রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত ৯ মাসেও আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের আহত ও শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারেনি। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় মামলা বাণিজ্য চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে পুনর্বাসিত হচ্ছে, রাজনীতিতে ফেরার পরিকল্পনা করছে। অথচ গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী গঠিত নির্বাচন কমিশন গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষণা করতে সম্মতি দিচ্ছে না। তারা বলছে, এটি নাকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন সুস্পষ্টভাবে বলেছে, যারা গণহত্যা, লুটপাট, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থেকেছে তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো এই প্রস্তাবে সম্মত হচ্ছে না। এই নির্বাচন কমিশন কার পারপার্স সার্ভ করবে এটি নিয়ে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি।’ নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে এটি এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ভুলে গেলে চলবে না- এই জুলাইয়ের কারণেই আজকে অনেকে মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারছে, ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছে। অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামো এবং শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের উদ্দেশে ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথাটি থাকতে হবে।
এ সময় তিনি নতুন সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকে একত্রে ‘আইনসভা ও গণপরিষদ’ নির্বাচন হিসেবে আয়োজনের দাবি জানান।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গণ অভ্যুত্থানের সরকার। গণ অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে আপনারা সরকারে বসেছেন। যে আওয়ামী লীগ গণহত্যা চালিয়েছে সে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? ৫ আগস্ট জনগণ জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের নামে মুজিববাদী আদর্শের কোনো রাজনীতি বাংলাদেশে চলতে পারে না। এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন আছে। আওয়ামী লীগের নাম নিবন্ধনের খাতা থেকে কেটে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী ফ্যাসিজমের সব দোসররা ফের স্বৈরাচারের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। জুলাই প্রজন্ম বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ এক সেকেন্ডের জন্যও কোথাও দাঁড়াতে পারবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা না হলে জনগণ আওয়ামী লীগের বিচারকাজ নিজ হাতে তুলে নেবে।
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আমরা অনেক জায়গায় শুনতে পারি আওয়ামী লীগ ফেরত আসবে কি না, এটা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত। আমি বলি, এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নয়। এ সিদ্ধান্ত জনগণের। এ সিদ্ধান্ত যে শহীদ মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, সেই মায়ের। এ সিদ্ধান্ত আহত ভাই-বোনদের।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আহত এবং শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি না। আপনাকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি- গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ পিলখানা, শাপলা চত্বর, জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ খুনিদের দল। খুনিরা রাজনীতি করতে পারবে না। খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি বিষয় চেয়েছি। বিচার আর সংস্কার। এ দুটি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। শহীদ পরিবারগুলো বলছে, বিচার আর সংস্কার ছাড়া মাঠ ছাড়া যাবে না। আমরাও জুলাইয়ের মতো মাঠে থাকব। সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, বিচার পাওয়া যায়নি। আর কত গুম, খুন করলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে?
সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার না করা এ দেশের মানুষের সঙ্গে তামাশার শামিল। রাজনৈতিক দল হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য আওয়ামী লীগের নেই। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।