জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওঠাবসা হয় বহুজনের সঙ্গে। কারো সঙ্গে তৈরি হয় গভীর সম্পর্ক। সেসব সম্পর্ক সব সময় ভালো থাকে, ব্যাপরটা এমন নয়। ভুল-বোঝাবুঝি কিংবা অন্য কোনো কারণে সম্পর্কের মধ্যে ঘাটতি হওয়া স্বাভাবিক।
আমাদের রাগের কারণে অনেক সময় অনেক কথাই বলে ফেলি। কিংবা রাগের কারণে অনেক কথাই শুনতে হয়। তাই কারো কোনো কথায় বা কাজে কষ্ট অনুভূত হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই শ্রেয়।
কেননা ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। মানুষের মধ্যে মহৎ গুণের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে ‘ক্ষমাশীলতা’। সর্বোত্কৃষ্ট এ গুণ মানুষকে মহৎ বানায়। মানুষের সম্মান বাড়ায়।
এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।’ (মুসলিম)
ক্ষমার দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হয়। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারীকে ভালোবাসেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মানুষকে ক্ষমা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩
অন্যকে ক্ষমা করা এবং মানুষের ভুলের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করার উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন নবীজি (সা.)। তিনি ব্যক্তিগত কোনো কষ্টের প্রতিশোধ নেননি কখনো। ক্ষমাই করেছেন জীবনভর। বুখারির হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজির সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল মোটা কাপড়ের একটি ইয়েমেনি চাদর। এক বেদুইন নবীজির কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা কাপড়ের ঘষায় নবীজির কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশস্বরে নবীজিকে বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলো! নবীজি (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন। এর পর তাকে কিছু দেওয়ার আদেশ করলেন। তিনি একটুও রাগ করেননি। বিরক্তি ভাবও প্রকাশিত হয়নি তাঁর থেকে। এটি মানবজীবনে ক্ষমা ও ছাড়ের প্রবাদপ্রতিম এক দৃষ্টান্ত।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৪৯)
মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাদের ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। তাই তিনি তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে এই গুণ অর্জনে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন। আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য ক্ষমার উত্তম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) অপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ আর তিনি যেহেতু আমাদের জন্য শিক্ষক, তাই তাঁর এই শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদেরও হতে হবে ক্ষমাশীল। কেউ বারবার অসদাচরণ করার পরও যদি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তাহলে একসময় সে তার ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শুধরে নেয়। ক্ষমা করার এই মানসিকতা যদি আমরা সমাজে লালন করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ আরো সুন্দর হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন