তিন মেয়ে এক ছেলের পরিবার। প্রবাসী স্বামী দেশে ফিরেছেন অনেকটা খালি হাতে। স্বামীর আয় না থাকায় সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন এসএসসি পাশ করা কোহিনূর বেগম। বাড়ির পাশের জমিতে তিনি বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করেন। কিন্তু তেমন সফলতা পাচ্ছিলেন না। একদিন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুনকে তার পরিবারের খারাপ অবস্থার কথা বলেন।
সাহিদা খাতুন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বিনা) বিনা লেবু-১এর একটি প্রদর্শনীর কথা বলেন। প্রথমে কোহিনুর বেগম লেবুর বাগান করতে রাজি হননি। লেবু চাষে ভালো ফলন হয় কিনা? গ্রাহক পাবেন কিনা? নানা সংশয়। পরবর্তীতে তিনি রাজি হন। লেবুর প্রদর্শনী পেয়ে ৪৫টি চারা লাগান বাড়ির পাশের ১০ শতক জমিতে। এরপরে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রমজান মাসে বিক্রি করেন প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার লেবু। এখন প্রতি মাসে বিক্রি করছেন ২৫-৩০হাজার টাকার লেবু ও কলম। এই চিত্র কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার যশপুর গ্রামের।
সরেজমিন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগান জুড়ে বাতাসে ভাসছে লেবুর মিষ্টি গন্ধ। গাছের এক ডালে ফুল আরেকটিতে ফল। ১২মাসই লেবু পাওয়া যাচ্ছে। বিনা লেবু -১ বীজ বিহীন। চমৎকার সুগন্ধ। এই সুঘ্রাণ সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছে কোহিনুরের পরিবারে। খেতেও স্বাদে অন্য লেবু থেকে আলাদা। গাছে গুটি কলম করা হয়েছে চারার জন্য। উদ্যোক্তা কোহিনুর বেগম লেবু তুলছেন। তাকে জমির পরিচর্যায় সহায়তা করেন স্বামী ও ছেলে মেয়ে। কোহিনুর বেগমের লেবুর চাষ দেখে যশপুরসহ কয়েকটি গ্রামের নারীরা লেবুর চাষ শুরু করেছেন।
কোহিনুর বেগম বলেন, পারিবারিক এক ঋণের কারণে আমরা জমি বিক্রি করে বেকায়দায় পড়ে যাই। এছাড়া স্বামী প্রবাস থেকে আসেন অনেকটা খালি হাতে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুনের পরামর্শে লেবু বাগান করার পর আমরা অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে অভিজ্ঞ করেছি। এখন লেবুর সাথে সবজি, ধান চাষ ও গরু পালন করছি। আরো ৩০ শতক জমিতে লেবুর চাষ করবো। আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আয় হচ্ছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বাকি দুই ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। ছেলেকে জাপান পাঠানোর পরিকল্পনা করছি।
কোহিনুর বেগমের প্রতিবেশী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তাছলিমা আক্তার বলেন, আমার জেঠাতো ভাবির লেবুর চাষ দেখে আমিও চাষ শুরু করেছি। আমার গাছেও ভালো লেবু ধরেছে। এছাড়া আমার মিশ্র ফল বাগান রয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, এই জমিতে সবজি চাষ করতেন। প্রথমে তারা লেবু চাষে রাজি হননি। বিনা লেবু-এর চারা লাগানোর পর ৬মাসে ফুল ধরা শুরু করে। তারা ভালো আয় করতে পেরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্র কুমিল্লার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, কোহিনুর বেগমকে আমরা প্রথমে বিনা লেবু-১এর ৪৫টি চারা দেই। তাকে বাগান করায় সহযোগিতা করি। তিনি এক বছরের মাথায় লেবু বিক্রি শুরু করেন। এখন প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। লেবু ও চারা বিক্রির মাধ্যমে তিনি পরিবারের অস্বচ্ছলতা দূরের সাথে দেশের ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করছেন। তাকে দেখে অন্যরাও লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অস্বচ্ছল মানুষের জন্য লেবু বাগান ভাগ্য বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন