প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া ও খরায় গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগান মালিকরা। এভাবে চলতে থাকলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মাসেও বৃষ্টি না হলে আম উৎপাদনে তেমন কোনো ব্যঘাত ঘটবে না। এমন আবহাওয়ায় আমগাছের গোড়ায় সব সময় পানি এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টনের অধিক আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই নওগাঁ জেলায় বাড়ছে আম বাগান। আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে ছাড়িয়ে গেছে এই বরেন্দ্র জেলা। আর কয়েকদিন পরই আম গাছ থেকে নামিয়ে বাজারজাত করার স্বপ্ন দেখছিলেন এ অঞ্চলের বাগানিরা। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা তাপদাহ তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র খরায় আমের বোঁটা লাল হয়ে ঝরে পড়ছে। জেলায় যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার ৭০ শতাংশই সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলায়। এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। আম্রপালির সুনাম রয়েছে দেশ ও বিদেশে। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলার ৬০ শতাংশ বাগানেই রয়েছে আম্রপালি ও ২০ শতাংশ বাগানে রয়েছে বারি-৪। এ ছাড়া কাটিমন, গোপালভোগ, নাক ফজলি, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, বারি-৪ ও গুটি জাতের আমের সুনাম রয়েছে। প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের আম যাচ্ছে ভারত, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
পত্নীতলার আম চাষি রুহুল আমিন, আবদুস সালাম জানান, প্রচ খরায় যে পরিমাণ আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে তাতে এবার লোকসান গুনতে হবে। পানি সংকটের কারণে বাগানে সেচ দিতে পারছেন না তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। সাপাহারের আম চাষি কোরবান আলী প্রামাণিক, সুবল চন্দ্র জানান, পানি সংকটের কারণে গাছে খুব কষ্ট করে পানি স্প্রে করা হচ্ছে। গত বছর থেকে এবার খরার প্রবণতা বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খরার কারণে কিছু আম ঝরে পড়লেও তেমন সমস্যা নেই। ঝরে পড়ার পর যে আম থাকবে সেগুলোর মান ভালো থাকবে। খরার আগেই গাছে আম মটর দানায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমন আবহাওয়ায় আমের গাছের গোড়ায় সব সময় পানি দিতে হবে। তা না পারলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। গত বছরের চেয়ে এবার ফলন বেশি হওয়ার আশা করছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই