অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকলে এখন থেকে আর কেউ প্যারোলে মুক্তি পাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বিবেচিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ডিটেনশন সেন্টারেই থাকতে হবে। আর এ বিবেচনার প্রাথমিক দায়িত্বটি পালন করবেন অ্যাসাইলাম ইমিগ্রেশন অফিসাররা। আগে ছিল ইমিগ্রেশন কোর্টের ওপর। এতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ডিটেনশনে রাখা এবং খাওয়া বাবদ সরকারি ব্যয় বাড়বে। যে ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কংগ্রেসে পাস হওয়া ট্রাম্পের বিগ বাজেটে সন্নিবেশিত করা আছে। আগামী চার বছরের জন্য এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং ডিটেনশন সেন্টারে বেডের সংখ্যা দ্বিগুণ অর্থাৎ ১ লাখ করা হবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের আওতায় আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) পরিচালক টোড এম লিয়ন্স কর্তৃক ৮ জুলাই সারা আমেরিকার ২০০ ডিটেনশন সেন্টারের সব অফিসারের মধ্যে বিতরণ করা সার্কুলারে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে। এতে কয়েক হাজার বাংলাদেশিসহ ৫০-৬০ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো মন্তব্য করেছে। কারণ এতদিন অভিবাসনের আইন লঙ্ঘনের ব্যাপারটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়নি। এটা দেওয়ানি অপরাধ বিবেচনা করায় বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের পরই গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন জানালে প্রায় সবাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতো। ট্রাম্প প্রশাসনের এ বিধি জারির পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসাইলাম অথবা রিফিউজি হিসেবে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের সিদ্ধান্ত হওয়া পর্যন্ত ডিটেনশন সেন্টারে কাটাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, জান্নাতুল রুমাসহ বাংলাদেশি-আমেরিকান কয়েকজন আইনজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে লাখখানেক বাংলাদেশি মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই অ্যাসাইলাম চেয়েছেন। তাদের ৮০ ভাগকেই প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন কোর্টে তাদের আবেদন অপেক্ষমাণ থাকলেও সবাই ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন এবং স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের উপরোক্ত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন কোর্টে হাজিরা দিতে গেলেই প্যারোল বাতিল করে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ১৪ জুলাই আরও জানানো হয়েছে, নতুন নির্দেশনার পর নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ওরেগন, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইও এবং জর্জিয়া ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরা দিতে যাওয়া সবার প্যারোল বাতিল করা হয়েছে এবং তারা এখন ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করছেন। অ্যাসোসিয়েশনের সরকার সম্পর্কিত জ্যেষ্ঠ পরিচালক অ্যাটর্নি গ্রেগ চেন বলেছেন, ‘অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে ডিটেনশন সেন্টারগুলোয়। কারণ এসব সেন্টারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারের মতো। সেখানে রাখা হয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি অভিবাসীকে।’ জানা গেছে, আবেদনকারীদের পরিস্থিতি সুচিন্তিতভাবে বিবেচনা না করেই প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ বাতিল করে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার এবং আটক রাখার এমন বিধি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। অন্যদিকে অভিবাসনব্যবস্থার বিরোধিতাকারী সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ক্রিকোরিয়ান বলেছেন, ‘আইন লঙ্ঘনকারীদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখার বর্তমান ব্যবস্থাটি অতি উত্তম। এজন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও দোষের কিছু নেই। তাহলে আইন লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার প্রবণতা অনেক কমবে এবং ট্রাম্পের এ মেয়াদে তার সুফল আসতে শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে আইসের রিপোর্ট অনুযায়ী বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের পর অ্যাসাইলাম অথবা রিফিউজি হিসেবে আবেদনকারী ৭৬ লাখ বিদেশিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন এ বিপুলসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্যারোল বাতিল করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তেমন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।