নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়াবহ বিষাক্ত আগাছা ‘পার্থেনিয়াম হিসটেরোফরাস’। স্থানীয়ভাবে অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকদের ভাষায় এটি এক ‘নীরব ঘাতক’। দেখতে নিরীহ চন্দ্রমল্লিকার মতো সাদা ফুলওয়ালা এই গাছটি মানবদেহ, পশুপাখি এবং কৃষিকাজের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।
বড়াইগ্রামের প্রায় সব ইউনিয়নের রাস্তার ধারে, পতিত জমি, বাড়ির আঙিনা এমনকি চাষাবাদের জমিতেও দ্রুত বিস্তার লাভ করছে এই আগাছা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে কৃষি উৎপাদন, পশুপালন এবং জনস্বাস্থ্যে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মলয় কুমার কুন্ডু বলেন, 'এই গাছের রেণুতে থাকা ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ নামক বিষাক্ত উপাদান ত্বকে লাগলে চুলকানি, একজিমা ও অ্যালার্জি হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবেশ করলে হতে পারে হাঁপানি, জ্বর, মাথাব্যথা এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।'
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরে আলম সিদ্দিকীর মতে, 'গরু-ছাগল এই গাছ খেলে তাদের মুখে ঘা হয়, অন্ত্র পচে যায়, ডায়রিয়া হয় এবং দুধ উৎপাদন কমে যায়। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।'
এই আগাছার কৃষি খাতে প্রভাব সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, 'এটি আশেপাশের ফসলের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। একটি গাছ মাত্র ৩-৪ মাসে প্রায় ৩০ হাজার বীজ উৎপাদন করে, যা বাতাসে ভেসে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার ঘটাতে পারে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে উপজেলার কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।;
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, 'পার্থেনিয়াম শুধু একটি আগাছা নয়, এটি এক নীরব মহামারি, যা মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিকুল এবং পরিবেশকে নিঃশব্দে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বড়াইগ্রাম এখনই ব্যবস্থা না নিলে হবে এই আগাছার প্রথম বড় শিকার।'
বিডি প্রতিদিন/মুসা