প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯৬ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩১ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি। অভিযানে ৩০০ জনের বেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে ১৩১ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনে বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির বিবৃতির বরাতে বলা হয়, ফেরত পাঠানোদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ৩০ জন পাকিস্তানি পুরুষ এবং পাঁচজন ইন্দোনেশীয় নারী-পুরুষ রয়েছেন। মালয়েশিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত পূরণে ঘাটতি পাওয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। শর্ত পূরণ না হওয়া বলতে ‘সন্দেহজনক’ হোটেল বুকিং, ইমিগ্রেশন কাউন্টারে হাজির না হওয়া এবং পর্যাপ্ত অর্থ সঙ্গে না রাখার মতো কারণ দেখানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সাধারণত ভ্রমণকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে। কেউ যদি বলেন যে তিনি এক মাস থাকবেন, কিন্তু সঙ্গে আছে মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত, তাহলে তার বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, তা পূরণ করেই যেন আগ্রহীরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেন, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয় বিবৃতিতে।
এদিকে বাতিক এয়ারের চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিগামী বাংলাদেশি দুই শিক্ষার্থী ইন্দোনেশিয়ার বালি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে আছেন। ওই দুই শিক্ষার্থী হচ্ছেন আদনান আল মাহমুদ ও মুকসিনুল হোসেন। শনিবার রাতে তারা ঢাকা থেকে সিডনির উদ্দেশে রওনা হন। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও এয়ারলাইনসের অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের সেমিস্টারে অংশ নেওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এয়ারলাইনসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিববরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীদ্বয়ের অভিভাবকরা।
মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে মালয়েশিয়া -আসিফ নজরুল : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে দেশটির সরকার। গতকাল ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। পরে পৃথক এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা জানান, গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালকের পক্ষে একটি পত্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বিদ্যমান সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসাকে (এসইভি) বর্ধিত করে মাল্টি এন্ট্রি ভিসা সুবিধায় উন্নীত করে পত্র জারি করেছে। এর আগে যেসব বাংলাদেশি কর্মীর সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা এবং টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট ভিজিট পাস (পিএলকেএস) ইস্যু করা হয়েছে, তাদের নতুন করে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) আবেদন করতে হবে না। পিএলকেএস নবায়নের সময় এমইভি নিজে থেকেই ইস্যু করা হবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে এই পত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যেসব বাংলাদেশি কর্মীর এসইভি ছিল এবং পিএরকেএস বৈধ আছে তারা নতুন এমইভি ছাড়াই মালয়েশিয়া আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, মালয়েশিয়া ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকে। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার পরিবর্তে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হচ্ছিল। এটি নিয়ে প্রবাসীদের অনেক ভোগান্তি হতো। গত মাসে লুৎফে সিদ্দিকীসহ একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করে। উনাকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার পর তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। অবশেষে এ বিষয়ে অফিশিয়াল সোর্স থেকে সুসংবাদটি নিশ্চিত করা হলো।
এর আগে, কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে একটি নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছে।