রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) মাইন উদ্দিন নিজের জারি করা নির্দেশনাই মানেননি। মামলা চলমান অবস্থায় তিনি রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) ডিলার নিয়োগ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের কাছ থেকে পরে উপঢৌকন নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লটারির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে দাবি করলেও পছন্দের বাইরে অন্য আবেদনকারীদের জানানো হয়নি লটারির দিনক্ষণ। তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিনের দাবি, পুরো প্রক্রিয়া লটারির মাধ্যমে হয়েছে। আবেদনকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ অন্য সব জেলায় পুরোনো ডিলাররাই দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ গত ১ জুলাই রাজশাহী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য ৩০ জন ডিলার নিয়োগ দেয় আরসি ফুড। যদিও এর মাত্র ১৩ দিন আগে ১৮ জুন তিনি তার অধীনস্থ রাজশাহীর আট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের একটি চিঠি যেসব জেলায় ওএমএস ডিলার নিয়োগে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, সেসব জেলায় ৩০ জুনের মধ্যে ডিলার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন তিনি। অথচ রাজশাহী মহানগর এলাকার ডিলার নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলেও তিনি নিজেই নতুন নিয়োগ দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তরের মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ১১ ফেব্রুয়ারি উপপরিচালক অনির্বাণ ভদ্র আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের একটি চিঠি দিয়ে জানান, যেসব জেলা বা উপজেলায় ওএমএস কিংবা খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে মামলা হয়েছে সেসব এলাকায় আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ কিন্তু রাজশাহীতে মামলা চলমান অবস্থায় নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এটি আদালত অবমাননার শামিল, বলছেন আগের ডিলাররা।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবেদনকারী কামাল হোসেন জানান, কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে নিয়োগ বাতিল করায় উচ্চ আদালতে রিট করেন পুরোনো ডিলাররা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ডিলার নিয়োগ কার্যক্রম কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে লাইসেন্সের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত পুরোনো ডিলারদেরই কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেন আদালত।
প্রায় ১৫ বছর ধরে নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ছিলেন আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রিট চলমান অবস্থায় নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কেন করা হয়নি তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমরা জেনেছি যে মোটা অঙ্কের অনৈতিক লেনদেনের জন্য নতুন করে তড়িঘড়ি ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ বিভাগীয় ওএমএস নিয়োগ কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন করলেই ডিলাররা পরবর্তী এক বছরের জন্য বৈধতা পেয়ে যেতেন। এর আগেই আমরা নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। তাই বিষয়টা যেন স্ববিরোধী না হয়, তার জন্য লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। লাইসেন্স নবায়ন না করা, নিয়োগ বাতিল এবং নতুন নিয়োগ নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তারা আইনগতভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করতে পারেন।’