জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। মাঠে উপস্থিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে-কলাকৌশল সমন্বয়সহ সবখানে অবদান রেখেছেন নারীরা। স্বৈরাচার পতনের এই আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের উত্থান স্মরণ এবং অভ্যুত্থানের অংশীদার সকল নারী যোদ্ধা, শহীদ নারীদের শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নারী সংহতি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে সমাবেশ ও মশাল মিছিল।
যৌথভাবে সমাবেশের সঞ্চালনা করেন নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক রেবেকা নীলা।
জুলাইয়ে রাজপথে দাপিয়ে বেড়ানো নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অপরাজিতা চন্দ বলেন, নারীদের এই উত্থাান, রাতের শহর দখল পুরো আন্দোলনের চেহারাটাই বদলে দেয়। তাদের সাহস সঞ্চারিত হয় পুরুষ শিক্ষার্থীসহ পুরো দেশের মানুষের মাঝে। নারীরা শেষ পর্যন্ত সকলের সাথে লড়াইয়ে সমানভাবে থেকে স্বৈরাচারকে হটায়।
সমাবেশে সভপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল। জুলাই পরবর্তী দেশে চলমান মব সন্ত্রাস, ধর্ষণ, নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে শ্যামলী শীল বলেন, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও নারী বিদ্বেষী তৎপরতা বন্ধসহ সমাজের সকল স্তরে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। দেশে কোনো রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া নারী প্রশ্নকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এজন্য অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির উত্থান জরুরি বলে মনে করি।
সমাবেশে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এবং নারীবিদ্বেষী সব তৎপরতা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৩৫ শিশু ও ১১ নারী শহীদের নাম উল্লেখ করে সমাবেশ সঞ্চালনাকালে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রেবেকা নীলা। একই সঙ্গে শহীদদের হত্যার বিচার ও আহতদের পুর্নবাসনের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি।
বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া বম নারীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বক্তৃতা দেন সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী ফারজানা হয়াহিদ সায়ান। তিনি বলেন, জুলাইজুড়ে নারী মাঠে থাকলেও নারীদের ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসিনি।
গ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সামু বলেন, যেখানে জুলাই আন্দোলনে নারীরা রাতভর রাজপথ দাপিয়ে বেরিয়েছে সেখানে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঢোকার প্রবেশসীমা নির্ধারণ করা হয়। এসব বাধা পেরিয়ে নারীদের এগিয়ে যেতে হবে।
এছাড়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কানিজ ফাতেমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জিন্নাত আরা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সাইদিয়া গুলরুখ, মানবাধিকার কর্মী আনাদিল।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলিফ দেওয়ান, নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুড়া, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মামাচিং মারমা।
সমাবেশ শেষে মশাল মিছিলটি শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্য ঘুরে শাহবাগে এসে শেষ হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ