বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত অতিরিক্ত শুল্ক কমাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বিকালে রাজধানীর বনানীর হোটেল সেরিনায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ইস্যুতে আমরা আজ রপ্তানিমুখী বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁরা সবাই মনে করেন এ আলোচনা আরও ফলপ্রসূ ও শক্তিশালী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে গার্মেন্ট, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক মতামতের নানান দিক রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ শুল্ক আমাদের অর্থনীতি, রপ্তানি খাত ও লাখ লাখ মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িত।’ বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের মতামতসহ বিষয়টি সরকারের কাছে উপস্থাপন করব। এটি এককভাবে নয়, বরং সমন্বিতভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’ ৮ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ইতোমধ্যে গার্মেন্ট খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ভারতও আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সরকার।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন সোমবার সচিবালয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ের বিষয়গুলো সমন্বয় করে দ্রুত তৃতীয় দফার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাব।’ এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ কে আজাদ ও সিমিন রহমান, চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভীরুর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, লেদার গুডস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সিরামিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ জাব্বার এবং টেরি টাওয়াল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য তাসভীরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট রপ্তানির একটি বিশাল অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতে। এতে প্রায় ১৫-১৬ লাখ মানুষের জীবনজীবিকা জড়িত। শুধু ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে অনেক অর্থনৈতিক কার্যক্রম। আমরা বর্তমানে কঠিন সময় পার করছি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’