কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা গল্পে গল্পে তাঁর অভিনীত ‘শুভদা’ চলচ্চিত্র নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। আনোয়ারা বলেন, ‘পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম আমাকে ‘শুভদা’ চলচ্চিত্রের নায়িকা চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। তবে এ চলচ্চিত্রে আমি অদ্ভুতভাবে যুক্ত হই। কারণ, এটি আমার করার কথা ছিল না; করার কথা ছিল সুচন্দা ম্যাডামের। চাষী সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করে শুভদা চরিত্র করার কথা বললেন। চাষী সাহেব এত বড় মাপের নির্মাতা। তিনি অনুরোধ করছেন আমাকে। আমি অবাক হই। তখন বলি, না, না। আমি কেন করব। আমি করতে পারব না। সুচন্দা ম্যাডামেরই তো চরিত্রটি করার কথা। তাঁকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। আমি করলে তিনি মাইন্ড করবেন। আর তিনি কেন করবেন না?’ তখন চাষী সাহেব বললেন, ‘তাঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেই ফোনে, তাহলে তো জানতে পারবেন’। তখন তিনি তৎক্ষণাৎ সুচন্দা ম্যাডামের কাছে কল দিয়ে আমাকে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বললেন। সুচন্দা ম্যাডাম আমাকে বললেন, ‘দেখেন একটু সমস্যা হয়ে গেছে। আমি এ কাজটি করতে পারছি না। আমি জানি, আপনিই উপযুক্ত এ চরিত্রের জন্য। কাজটি করলে খুশি হব।’ এরপর চাষী সাহেবের সঙ্গে কথা হলো। কাজটি করব বলে জানালাম। আরও খুশি হলাম যখন জানলাম, এ সিনেমায় রাজ্জাক সাহেবও অভিনয় করবেন। রাজ্জাক সাহেবকে আমার খুবই ভালো লাগত। তিনি আমার স্বপ্নের নায়ক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করব এটা স্বপ্নের মতো। মজার বিষয় হলো- আমাদের বাসা আর রাজ্জাক সাহেবের বাসা ছিল পাশাপাশি। বাসার জানালা দিয়ে তাঁকে প্রায়ই দেখতাম। আর ভাবতাম, ইশ্ তাঁর সঙ্গে যদি দেখা হতো একবার। আসলে তখন তো প্রত্যেক অভিনেত্রীরই স্বপ্ন ছিল রাজ্জাক সাহেবের বিপরীতে নায়িকা হওয়ার। আমারও এমন ছিল। তো সেটা সত্যি নাকি স্বপ্ন ভেবে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। তো এরপর যখন শুটিংয়ের সময় এলো তখন রাজ্জাক সাহেব আমাকে চাচি, চাচি বলে ডাকছেন! আমি বুঝতে পারলাম না, চাচি কেন! তিনি তো আমার নায়কই হবেন, তাহলে? রাজ্জাক সাহেবের মুখে চাচি ডাক শুনে তো আমি খুবই হতাশ হলাম। অবশ্য পরে চাষী সাহেব বললেন, এ সিনেমার নায়ক গোলাম মুস্তাফা। আর আমি গোলাম মুস্তাফার বিপরীতেই অভিনয় করব। হা হা হা... আসলেই মজার বিষয় ছিল। তবে গোলাম মুস্তাফা সাহেবও অনেক বড় অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি ধন্য। এ সিনেমায় আরও ছিলেন বুলবুল আহমেদ। তিনি তো চমৎকার ও অসাধারণ একজন ভালো মানুষ। আমি কিন্তু রহমান সাহেবের সঙ্গেও কাজ করেছি। অনেক বড় মাপের অভিনেতা। আর আনোয়ার সাহেবের সঙ্গে তো একসময় মঞ্চে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’য় আলেয়া চরিত্র করেছি। পরে অবশ্য খান আতাউর রহমান সাহেবের সিনেমায় একই চরিত্র আলেয়া করেছি, যেটি দর্শক অনেক পছন্দ করেছেন।’ সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারা আরেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলেন। তিনি তখনকার সাংবাদিক-শিল্পীর সম্পর্ক, এখনকার অবস্থা নিয়ে বিস্তর কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘আগের সময় তো সাংবাদিক-শিল্পীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। বিভিন্ন শুটিং স্পটে শিল্পী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাতেন, বাসায় দাওয়াত দিতেন। বিভিন্ন গোপন কথাও শেয়ার করতেন। তবে সাংবাদিক-শিল্পীর মধ্যে তখন ছিল শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক। যেটা এ সময়ে অনুপস্থিত। এখনকার শিল্পী ও সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক দূরত্ব। কেউ কাউকে শ্রদ্ধা বা সম্মানের চোখে দেখে না। যেটি খুবই খারাপ বিষয়। এগুলো ঠিক করা খুবই জরুরি।’
সম্প্রতি মগবাজারের বাচসাস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মিট দ্য প্রেস’-এর প্রথম পর্ব। এ অনুষ্ঠানে নিজের দীর্ঘ অভিনয়-জীবনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা, যেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারাকন্যা রুমানা ইসলাম মুক্তি। উল্লেখ্য, সেদিন বিস্তর গল্প-আড্ডা শেষে ‘বাচসাস’-এর পক্ষ থেকে কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারাকে স্মারক সম্মাননা প্রদান করে জানানো হয় শুভেচ্ছা।