পরিবেশগতভাবে ‘সংকটাপন্ন’ বার্মিজ রক পাইথন প্রজাতির অজগর সাপের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটিয়ে বনে অবমুক্ত করছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে ১১৩টি অজগরের বাচ্চা অবমুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিল অভয়ারণ্যে ৩৩টি অজগরের বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়। যা প্রজাতিটির সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য, প্রাণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্মিজ রক পাইথন প্রজাতির অজগর বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চল ও পাহাড়ে বাস করে। প্রজাতিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের লাল তালিকার অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ এই প্রজাতির অজগর ‘সংকটাপন্ন’ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে।
এরমানে হলো সাপটি এখনো প্রকৃতিতে থাকলেও এর সংখ্যা কমে আসছে এবং বিলুপ্তির আশংকা আছে। এই সাপ মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর না হলেও মানুষ এই সাপের আবাসস্থল, খাবারের উৎস ধ্বংস করে কিংবা শিকার করে এদের সংকাটাপন্ন প্রজাতিতে পরিণত করেছে। তবে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বাচ্চা ফুটিয়ে এভাবে অবমুক্তকরণ এই প্রজাতিটির সুরক্ষায় আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রাণীবিদরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুপারনিউমেরারী প্রফেসর ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষায় অজগর সাপের ভূমিকা অনেক। নানা কারণে এই অঞ্চলের অজগরের প্রজাতিগুলো সংকটাপন্ন। এমন অবস্থায় ইনকিউবেটরে জন্ম নেওয়া অজগরগুলো এই প্রজাতির সুরক্ষায় নতুন সম্ভাবনা তৈরী করবে। যদিও ইনকিউবেটরে জন্ম হওয়া সব অজগর বনে গিয়ে নাও বাঁচতে পারে। তবে কিছুও যদি বেঁচে গিয়ে পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সেটাই ইতিবাচক।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় কোনো যান্ত্রিক প্রযুক্তি ছাড়াই ইনকিউবেটর তৈরী করা হয়। যেখানে বাহিরের পরিবেশ থেকে আলাদা একটি আবহ তৈরী করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ু চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে অজগর সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো সফলতা আসে। চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে সংগৃহিত অজগরের ডিম থেকে ২৫টি বাচ্চার জন্ম হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে যথাক্রমে ২৮টি, ১১টি, ১৬টি, ৩৫টি ও চলতি মাসে ৩৩টি অজগরের বাচ্চার জন্ম হয়।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, গত ৪ ও ১৪ এপ্রিল ৪৫টি চিড়িয়াখানার অজগরের খাঁচা থেকে ৪৫টি ডিম সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ১১-১৩ জুন এবং ২১-২৪ জুন দুই ধাপে ডিমগুলো ফুটে ৩৩টি বাচ্চার জন্ম হয়। এরপর এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে অবমুক্তকরণের উপযোগী হওয়ার পর সেগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর আগের চার বছরে আরও ৮০টি অজগরের বাচ্চা চুনতি অভয়ারণ্য ও সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়।
শুভ জানান, বাচ্চা ফোটার পর সেগুলোকে দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে বনাঞ্চলে অবমুক্ত করতে হয়। বেশি দেরি করলে সেগুলো চিড়িয়াখানার পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একারণে বনে অবমুক্ত করলে সেখানে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় জন্ম নেওয়া ৩৫টি অজগর অবমুক্ত করা যায়নি, সেগুলো চিড়িয়াখানাতেই আছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল