ঝিনাইদহে টাইগার মুরগি পালন করে বাজিমাত করেছেন সৌদি প্রবাসী নান্নু মণ্ডল। প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় লাখ টাকা। ভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ মুরগি পালন করায় তার খামার দেখতে ও পরামর্শ নিতে প্রতিদিন বাড়িতে ভিড় করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের জিতোড় ভবানীপুর গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন মণ্ডলের ছেলে নান্নু মণ্ডল জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। পাঁচ বছর সেখানে থাকার পর ভালো আয় না করতে পেরে দেশে ফিরে আসেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এরপর তিনি ইউটিউব দেখে টাইগার মোরগ-মুরগি পালনের উদ্যোগ নেন। জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ ও তার সঙ্গে দ্বিতলাবিশিষ্ট একটি খামার তৈরি করেন। প্রথমে ঢাকা-গাজীপুর থেকে ৬৩ টাকা দরে দেড় শ টাইগার মোরগ-মুরগির বাচ্চা কিনে আনেন। খামারের চারপাশে মেহগনি গাছ লাগান এবং নেট দিয়ে চারদিকে ঘিরে রেখেছেন। যাতে খামার থেকে মোরগ-মুরগিগুলো খোলা মুক্ত স্থানে ও শীতল আবহাওয়ায় বের হতে পারে। খামারে মুরগির বিশুদ্ধ পানি পান করানোর জন্য করেছেন সাব-মার্সিবল সিস্টেম। সুইচ দিলেই প্রতিটি পটে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি চুইয়ে পড়ে। তার খামারের বড় চমক হলো ব্ল্যাক সোলজার মাছি থেকে পোকা উৎপাদন। মুরগির শতভাগ প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য নিজ খামারের মধ্যে চাষ করছেন ব্ল্যাক সোলজার জাতের মাছি। এ খামারের চাষকৃত মাছি শুধু চিনির পানি খেয়ে বেঁচে থাকে।
এ মাছি ৭ থেকে ৮ দিন বেঁচে থাকে। পুরুষ মাছি বেঁচে থাকে ৩ থেকে ৪ দিন। কাঠ পেড়ে রাখার কারণে মহিলা মাছি বেঁচে থাকে ৬ থেকে ৭ দিন। এ মাছি ৬০০-৮০০ ডিম পাড়ে। এটি হ্যাচিং পদ্ধতিতে হাউস তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা শাকসবজি এবং মারা যাওয়া টাইগার মুরগি ও বাচ্চাগুলো দিলে কিছুদিনের মধ্যে বড় বড় পোকা তৈরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ছোট-বড় পার্থক্য রয়েছে। মাছ, মুরগি ও হাঁসের জন্য সবচেয়ে প্রোটিন খাদ্য মাছির ডিম থেকে পোকা উৎপাদন। তিনি খামারের দ্বিতীয় তলায় রেখেছেন মুরগির বাচ্চাগুলো। ছোট বাচ্চাগুলোর যে উচ্ছিষ্ট অংশ নিচে পানিতে পড়ে, সেই পানিতে চাষ করছেন দেশি জাতের জিওল মাছ। ওই উচ্ছিষ্ট খেয়ে বড় হচ্ছে জিওল মাছগুলো। প্রতিদিন ডিম সংগ্রহ করেন ২৬০টি। যে ডিমগুলো বাঁকা হয় সেগুলো বিক্রি করেন দেন তিনি। তার একটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো মেশিন রয়েছে। সেই মেশিনে একবারে ৩ হাজার ২০০ বাচ্চা ফোটানো সম্ভব। খাবার থেকে সংগ্রহ করা ডিম মেশিনে দিচ্ছেন আর বাঁকাগুলো বাজারে বিক্রি করে দেন। প্রতিদিন ৫০০ বাচ্চা মেশিন থেকে বের করেন। জিরো বাচ্চাগুলো ৫০ টাকা দরে ও ২২ দিনের বাচ্চাগুলো ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায় ১০০ বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি। বাকি বাচ্চাগুলো খামারে পালন করেন। আর বড় মোরগগুলো ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। দিনে ও রাতে তিনবার খাবার দেন। বড় মোরগ-মুরগিগুলোকে আরও খাওয়ান নেপিয়ার ঘাস। মেহগনি বাগানে গাছে বেঁধে দেন নেপিয়ার ঘাস। দিনে খোলা জায়গায় বের হয়ে মোরগ-মুরগিগুলো সেই ঘাস খায়। নান্নু মণ্ডল জানান, তার খামারে বাড়তি কোনো লোক নেই। তিনি ও তার স্ত্রী নাদিয়া ইয়াসমিন রুমি মিলে সব কাজ করে থাকেন। সে কারণে প্রতিদিন খামার থেকে ৫ হাজার টাকা করে আয় করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই