ফেনীতে তরমুজের চাষ এবং উৎপাদন বেড়ে চলেছে। জেলায় ৭৭৪ হেক্টর জমিতে এবার বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর তরমুজের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার টন ছাড়াবে। এবার তরমুজ চাষের সাথে সম্পৃক্ত থেকে প্রায় ৩ হাজার কৃষক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।
এদিকে, বেলে মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় জেলার সোনাগাজীর চরে দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ১৬০ টন তরমুজ উৎপাদন অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছর সোনাগাজীতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৭৭ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৪৯ দশমিক ৭৬ টন হলেও আবাদ ৩৬ হাজার টন ছাড়াবে। এছাড়া আবহাওয়া এবং বাজার অনুকূল থাকলে এ বছর সোনাগাজী হতে ১৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা তরমুজ বিক্রির আশা রয়েছে।
সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার তরমুজ আবাদকারী কৃষি উদ্যোক্তা আবু সাইদ রুবেল জানান, বন্যার পরে ফসলের মাঠে পলি জমেছে। এর ফলে সেই পলিতে তরমুজের আবাদ ভালো হচ্ছে। সারের খরচও কমেছে অনেক।
একই উপজেলার তরমুজ চাষি মো. তৈয়বুর রহমান জানান, আমি এ বছর চার একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফল আসা পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা বিক্রি হবে। আমি তরমুজ চাষে লাভবান হব।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা আব্দুর রহমান নামে এক তরমুজ চাষি জানান, তিনিসহ সোনাগাজী চরাঞ্চলে তিনজন সম্মিলিতভাবে চর ডুব্বা এলাকায় ৪৫ কানি জমিতে বাংলা লিংক ও জামব্বু জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। কানি প্রতি (৩৯.৬৭ শতক) খরচ হয় ১ লাখ টাকা। তবে গরম আবহাওয়া থাকায় এই বছর সেচের কাজে অতিরিক্ত আরও ১০-২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে কানিতে তরমুজ বিক্রি করা হবে ৩ লাখ টাকা।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, জেলায় অন্যান্য স্থানের মধ্যে দাগনভূঞার জয়লস্কর ইউনিয়নে নদী-খাল কেন্দ্রিক ১৩ হেক্টর জমিতে এবং সদর উপজেলার ধর্মপুরের জান্নাত এগ্রোতে এবং ধলিয়ার ইউনিয়নে সল্পপরিসরে ৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়াও ছাগলনাইয়ায় ৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
সোনাগাজীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্রনাথ জানান, পূর্বে সোনাগাজীর অনেক জমি রবি মৌসুমে খালি পড়ে থাকতো। ২০১৭ সালে নোয়াখালী থেকে আসা একজন কৃষক এই উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজচাষে অভাবনীয় সাফল্য পান। তার সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮ থেকে ১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। পরিচর্যা খরচের তুলনায় আয় বেশি হওয়ায় নোয়াখালী সুবর্ণচরের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে পতিত জমিতে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ে। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত