বৃষ্টির দিন মানেই সাজপোশাকে একটু বাড়তি সচেতনতা। ভেজা রাস্তা, কাদা আর হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা- সব মিলিয়ে ফ্যাশনে আরাম ও স্টাইল দুটোই ধরে রাখা এক চ্যালেঞ্জ। তবে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে বৃষ্টির দিনেও আপনি থাকবেন নির্ভার ও স্টাইলিশ...
বৃষ্টির মৌসুম মানেই সাজপোশাকে এক ভিন্ন ছন্দ। আকাশের মন খারাপের দিনগুলোতেও আপনি চান আপনার চলাফেরা হোক নির্বিঘ্ন, আর ফ্যাশন হোক আকর্ষণীয়। বর্ষার এই সময়টায় তাই পোশাক থেকে শুরু করে জুতো, অনুষঙ্গ এবং ছাতা পর্যন্ত সব কিছুতেই দরকার বিশেষ পরিকল্পনা। বৃষ্টিতে ভেজার পরেও যেন দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং কাদা লাগলেও সহজে পরিষ্কার করা যায়, এমন কাপড় ও অনুষঙ্গ বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
রং ও কাপড়ের বৈচিত্র্য
বৃষ্টির দিনগুলোতে ভারী কাপড় এড়িয়ে চলাই ভালো। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার ফ্যাশন থাকবে মলিন। বরং এই সময়ে রঙিন পোশাক আপনার মনকে সতেজ করে তুলতে পারে। শাড়ির ক্ষেত্রে গাঢ় রংগুলো যেমন : মেজেন্টা, বেগুনি, গাঢ় সবুজ, নীল, লাল ও হলুদ দারুণ মানিয়ে যায়। অন্যান্য রঙের মধ্যে ব্রাউন, নেভি ব্লু, মেরুনও বেছে নিতে পারেন। কাপড়ের ক্ষেত্রে পাতলা সিল্ক, মসলিন, জর্জেট, শিফন বা দেশি ভয়েল হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ। জর্জেট ও শিফন শাড়ি ভিজে গেলেও দ্রুত শুকিয়ে যায়। যারা আধুনিক শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তারা টাইডাই ফেব্রিক বা কুন্দন, জরি, কারচুপি করা শাড়িও পরতে পারেন। তবে বর্ষায় শাড়ির চেয়ে সালোয়ার-কামিজই বেশি আরামদায়ক। ঢিলেঢালা সুতি বা সিনথেটিক কাপড়ের কামিজ পরা যেতে পারে। ডেনিম কাপড় এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ভিজলে সহজে শুকায় না। লম্বা কামিজ বা প্যান্টের বদলে শর্ট টপস, ফতুয়া বা কুর্তা পরা ভালো, কারণ এতে কাদা লাগার ঝামেলা কম থাকে।
মেকআপে সতর্ক থাকুন
বৃষ্টির দিনে মেকআপ নিয়ে সচেতন থাকা খুব জরুরি, না হলে হঠাৎ বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন সেলিম তুলির মতে, বর্ষার মেকআপে কিছু কৌশল অনুসরণ করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। মেকআপ শুরু করার আগে মুখে বরফ কুচি ঘষে নিন। এরপর মুখ শুকিয়ে নিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার এবং অল্প পরিমাণে বেবি পাউডার মিশিয়ে মুখে পাফ করে নিন। এতে মেকআপ দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকবে। বৃষ্টির দিনে সব মেকআপ উপকরণ ওয়াটারপ্রুফ হওয়া চাই। ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করে শুধু ম্যাট উপকরণ ব্যবহার করুন। দিনের বেলায় হালকা এবং রাতের জন্য লাল, কফি, মেরুন, বাদামি বা পিচ রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। চোখে আইশ্যাডো ব্যবহার না করে আই পেনসিল ব্যবহার করতে পারেন। সবুজ, নীল, বেগুনি বা বাদামি রঙের আই পেনসিল আঙুল বা ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ব্লেন্ড করে নিন। গালে ক্রিমি নয়, বরং হালকা রঙের ম্যাট ব্লাশন ব্যবহার করা ভালো। ভ্রƒ ঘন দেখাতে বাদামি রঙের সঙ্গে খুব অল্প কালো আইশ্যাডো মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে এঁকে নিতে পারেন। সাজে আকর্ষণীয় ভাব আনতে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক এবং চোখের পাপড়িতে ঘন করে মাশকারা ব্যবহার করুন।
স্টাইলিশ ও টেকসই ছাতা
বর্ষার সাজপোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি সুন্দর ছাতা আপনার রুচির পরিচয় বহন করে। এখন বাজারে নানা ধরনের বাহারি রং ও ডিজাইনের ছাতা পাওয়া যায়। টিপ ছাতা, দুই ফোল্ডিং, তিন এবং চার ফোল্ডিংয়ের ছাতা বেশ জনপ্রিয়। এগুলো আকারে ছোট, সহজে বহনযোগ্য এবং দেখতে সুন্দর। দেশি ব্র্যান্ডের শরীফ ছাতা, মদিনা ছাতা, বঙ্গ ছাতা এবং বিদেশি ব্র্যান্ডের অ্যাটলাস, ইউনিক, অলিম্পিক ছাতা পাওয়া যায়। দাম ১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে একরঙা ছাতার চেয়ে প্রিন্টেড ছাতার চাহিদা বেশি। ফ্যাশন সচেতনরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ঝালর বসানো ছাতা কিনতে পারেন।
আরামদায়ক জুতো ও অন্যান্য অনুষঙ্গ
বৃষ্টির দিনে চলাফেরা আরামদায়ক করতে সঠিক জুতো নির্বাচন জরুরি। এমন জুতো বেছে নিন যা সহজে কাদাপানিতে নষ্ট হবে না। এ সময় প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল সবচেয়ে ভালো। এছাড়া, হাতের ঘড়ি মুঠোফোনটি অবশ্যই পানিরোধী হওয়া উচিত। অন্যথায় পানিরোধী ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
লেখা : ফেরদৌস আরা