চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গার্বেজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের মাধ্যমে আবর্জনা থেকে জৈব সার ও কালো লাকড়ি উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। চালুর পর মোটামুটি সচলই ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দুটি প্রকল্পই বন্ধ। পড়ে আছে মেশিনগুলো।
ব্যবহার না হওয়ায় মেশিনগুলো এখন অনেকটা অকেজো হওয়ার পথে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতি বছর ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা কর্মরতদের বেতন খাতে ব্যয় হয়। চসিকের তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল নগরের হালিশহর আনন্দবাজার এলাকার দুই একর জায়গায় গার্বেজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে লাকড়ি উৎপাদন তেমন না হলেও সার তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু সেটিও গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ। পচনশীল আট টন আবর্জনা থেকে এক টন সার উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
জানা যায়, প্রথম দিকে নগরের গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে সার তৈরি করা হতো। পরে ইপিজেডের ক্যান্টিন থেকে বের হওয়া সবজির বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে। এখন সেই বর্জ্য না পাওয়ায় সার তৈরি বন্ধ আছে। এক দফার বর্জ্য ৪৫ দিন পর্যন্ত প্রক্রিয়া করে দেড় টন সার উৎপাদন করা যেত। সার তৈরিতে ব্যবহার হতো তিনটি কাটিং মেশিন, একটি নেটিং মেশিন, চারটি মিলিং মেশিন ও চারটি দানাদার মেশিন। কিন্তু এসব মেশিন এখন অলস পড়ে আছে, ধরেছে জং। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন সাতজন। সার বিপণনে একজন ডিলার থাকলেও তিনি এখন আর ব্যবসা করেন না। সবুজ সবজির বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা প্রতি কেজি সার বিক্রি হতো ১০ টাকা। অন্যদিকে উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ বর্জ্য থেকে লাকড়ি উৎপাদন প্রকল্পটি। বর্তমানে সেখানে তিনটি মেশিন অলস পড়ে আছে। সেগুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে।
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জসিম উদ্দিন বলেন, বর্জ্য থেকে সার ও কালো লাকড়ি তৈরি অনেক দিন ধরেই বন্ধ। এখন বর্জ্য থেকে সার তৈরির প্রধান উপকরণগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। এটা নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, সার তৈরির জন্য গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে আবর্জনাগুলো প্রকল্প স্থানে আনা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর আবর্জনাগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এ ক্যাটাগরির আবর্জনা অতিদ্রুত পচনশীল, বি ক্যাটাগরির এর চেয়ে বেশি ও সি ক্যাটাগরির তার চেয়েও বেশি সময়ে পচে। এরপর আবর্জনাগুলো মিশিয়ে নির্দিষ্ট বক্সে প্রক্রিয়ার জন্য রাখা হয়। প্রতিটি বক্সে ১০ ধাপে রাখা আবর্জনাগুলো ৪০ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময় সেখান থেকে একটি মাত্রার গরম হাওয়া বের হয়। পরে আবর্জনাগুলোর গরম হাওয়া স্বাভাবিক মাত্রায় আসলে বাক্স থেকে নিয়ে খোলা জায়গায় বিলিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো দৈনিক নড়াচড়া করে চকলেট কালার আসা পর্যন্ত রৌদ্রের তাপে রাখতে হয়। এরপর মেশিনে আবর্জনাগুলো কাটিংয়ের পর ছোট-বড় পৃথক করা হয়। এ প্রক্রিয়ার একটি অংশ সার হয়। সারের জন্য বাছাই করা আবর্জনাগুলোকে এরপর মিলিং করা হয়। এখানে কিছু পাউডার আর কিছু দানা হিসেবে বের হয়। এরপরই দানাগুলোকে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়।