ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সড়ক মোড়ে গাড়ির জটলা। এই মোড়ে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন অনাবিল, ঠিকানা, বোরাক পরিবহনের কর্মীরা। একই সঙ্গে রয়েছে লেগুনা, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রতিটি পরিবহন সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড়ে বেধে যায় দীর্ঘ জটলা। সাইনবোর্ড মোড় ঘুরে এ চিত্রই দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এ চিত্র প্রতিদিনেরই। তবে ওই সময় পুলিশকে দেখা না গেলেও মাঝেমধ্যে আসেন তারা।
শুধু সাইনবোর্ডে নয়, একই অবস্থা রামপুরা থেকে ডেমরা সড়ক মোড়েও। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আবদুল্লাহপুর থেকে আসা রমজান, আলিফ, অছিম, আসমানী, রাজধানী পরিবহনগুলো মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলে। যত্রতত্র বাসগুলো রেখে যাত্রী তুলতে হাঁকডাক দেয় কর্মীরা। মোড়েই জটলা শুরু হয়। এর জটলার চাপ রামপুরা-মালিবাগ সড়কে পড়ে। এতেই রামপুরা থেকে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত যানজট বিশৃত হয়। এতেই ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীরা। যদিও এই মোড়ে প্রতিনিয়তই পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে তাদের অ্যাক্টিভ দেখা যায় না। পুলিশ সদস্যরা হয় দাঁড়িয়ে থাকে না হয় ছাউনির নিচে বসে থাকে। আর হয় দোকানে চা খেয়ে গল্পে মাতেন তারা।
রামপুরা মোড়ে মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন সাইফুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি যাবেন ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারে। সাইফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গাড়ি দাঁড়ানোর জন্য স্টপেজ দেওয়া আছে। কিন্তু গাড়ি সেখানে দাঁড়ায় না। মোড়গুলোতেই দাঁড়াচ্ছে। আমাদেরও কিছু করার নেই। তিনি অবশ্য মনে করেন, মোড়ে গাড়ি দাঁড়ানোর কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে সবাই সচেতন হতে হবে।
এই মোড়ে যেসব বাসযাত্রী তুলছিল তার একটি আলিফ পরিবহন। মোড়ে রাস্তা আটকে কেন যাত্রী তুলছেন- জানতে চাইলে চালক সুলতান মিয়া যাত্রীদের ওপর দোষ দেন। তিনি বলেন, ‘আমাগো কী করণের আছে, যাত্রীই তো স্টপিজে থাকে না। সব যাত্রীই এই হানে, ওই হানে গাড়ি না দাঁড়াইলে যাত্রী পামু কই।’ রাজধানীর যে কোনো মোড়েই যাত্রী ওঠানামা নিষিদ্ধ। আবার বামের রাস্তায় বিঘ্ন ঘটিয়ে কোনো গাড়িই দাঁড়ানো নিষেধ। কিন্তু রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর ১ বা ১০ নম্বর, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, আজিমপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলশান, উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালী, কাকরাইল, বাংলামোটর, পল্টন মোড়ে গেলে কে বলবে এমন কোনো নিয়ম আছে?
মোড়ে মোড়ে পথ আটকে বাস শ্রমিকরা যাত্রীর জন্য কর্কশ ভাষায় ডাকাডাকি চোখে পড়ে নিত্যদিন। এ গাড়ির জন্য পেছনে আটকে থাকা গাড়ির সারিগুলো ক্রমশই দীর্ঘ হয়। মোড়ে পুলিশ থাকলেও দেখেও না দেখার মতো করে উদাসীন তারা। আর ভোগে নগরবাসী। কোথায় বাস থামবে না, আইনে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। মোড়ের একটু আগে বা পরে গাড়ির থামার জায়গাও নির্দিষ্ট। কিন্তু মোড়ে জটলা বেশি থাকে বলে সেখানেই বেশি আগ্রহ পরিবহন শ্রমিকদের। গত সোমবার রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পর্যবেক্ষণ দেখা যায় প্রতিটি বাসেই যাত্রী ওঠানামা করছে মোড়ে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘক্ষণ যাত্রীর জন্য চেঁচামেচি করতে থাকা বাস শ্রমিকরা ততক্ষণ থামে না যতক্ষণ না ভিতরের যাত্রীরা বকুনি দিতে থাকে। পেছনে দীর্ঘ যানজট বেধে গেলেও কোথাও পুলিশের কোনো তৎপরতাই চোখে পড়েন।
রাজধানীর সব সড়কেই গণপরিবহনগুলো চলছে চালকের ইচ্ছেমতো। চালকরা তাদের বাসে যাত্রী ওঠানোর সুবিধার্থে যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। কোনো কোনো সড়কে যাত্রীদের হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন চলন্ত গাড়ি। রাজধানীর গণপরিবহনগুলো যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী নেওয়া যেন তাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। যেখানে-সেখানে থামছে বাসগুলো। ইচ্ছেমতো সড়কের ওপরই যাত্রী তোলা হচ্ছে। মানুষও দৌড় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা করছে। বিশেষ করে রাস্তার মোড়গুলোতে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দীর্ঘসময়। মোড়গুলোতে বাস দীর্ঘসময় দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে পেছনে পরিবহনের লম্বা সারি সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। অনেক সময় একই পরিবহনের গাড়ি যাতে সামনে চলে না যায়, সেজন্য সড়কের মাঝে থামানো হচ্ছে বাস। এতে কখনো কখনো একটি গাড়ি দুটি লেন বন্ধ করে রাখছে। যেন পুরো সড়কই যেন বাস স্টপেজ। এতে পেছনের গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে যানজট। এসব ঘটছে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই।