পরিবেশ ও নদীর কোনো ক্ষতি না করে সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথের সম্মিলিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা খুবই হযবরল অবস্থায় রয়েছে।
এটাকে দ্রুত শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না গেলে পুরো ব্যবস্থাটা অর্থনীতির জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হবে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই আমাদেরকে কাজটা করতে হবে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘সেন্ট্রাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান অব বাংলাদেশ’ সংক্রান্ত প্রান্তিক মূল্যায়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যোগাযোগব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতেই হবে। এটা করতে গিয়ে নদীর ওপর কোনো আঘাত করা যাবে না, পানিকে শান্ত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে পানি আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ। পুরো পরিকল্পনাটা করতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে মাথায় রেখে। অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগব্যবস্থার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সড়ক পরিবহন, সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি প্রাথমিক কৌশলগত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এতে দেখানো হয়, সারা দেশের সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থার সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর সংস্কার ও সংযোজনের মাধ্যমে কীভাবে পুরো যোগাযোগব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়। এতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে থাকা রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথের যথাযথ ব্যবহার ও কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়ানো গেলে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করা সম্ভব। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেসব ক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু সড়ক নির্মাণ করে দিলেই পুরো অঞ্চলটাকে জাতীয় কানেক্টিভিটির মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কাজগুলোকে আরও পরিকল্পিতভাবে করতে একটি প্ল্যানার্স উইং গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে আরও তিনটি নতুন বন্দর চালু হবে। এটাকে বিবেচনায় রেখে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে।
ক্যানসার নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার রোগের বিষয়ে সারা দেশে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফ্যাটি লিভারজনিত ও স্তন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ এখন দেশের মানুষের প্রাণহানির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো প্রতিরোধ সম্ভব।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট প্রফেসর তো হান চংয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিংহেলথ ডিউকুএনইউএস গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর বিজয়া রাও এবং সিংহেলথ ও এডিনবারা ন্যাপিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ কালউইন্ডার কউর। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর পথ। এ রোগগুলো সম্পর্কে সারা দেশে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বৈঠকে প্রফেসর তো হান চং বলেন, ফ্যাটি লিভার এখন দক্ষিণ এশিয়ার শত কোটি মানুষের শরীরে নীরবে বাসা বাঁধছে, যা ভবিষ্যতে লিভার ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের কারণ হতে পারে। এই রোগ নিয়ে আরও বড় পরিসরে সচেতনতা জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা নারীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণ কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে চিকিৎসা খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। বিশেষ করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে।
প্রফেসর তো হান চং চলতি সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে চলবে বলে জানান।