বাড়ির পাশে সবুজ মাঠ। সেখানে ভোর থেকে ধানের জমির কাদায় নেমে আগাছা পরিষ্কার করছেন স্বামী। স্ত্রী খাবার নিয়ে এসেছেন। হাতে কাদা থাকায় স্বামীকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী মিলে গরুর খামারের গোবর পরিষ্কার করছেন। এটা আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ। তবে এ দম্পতির গল্প ভিন্ন।
স্বামী তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। একটি কোম্পানির বড় পদে চাকরি করতেন। স্ত্রী নাজমা আক্তার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। একটি কলেজে চাকরি করতেন।
তারা থাকতেন চট্টগ্রামে। নয় বছর আগের কথা। তাঁদের মেয়ে তখন ছোট। শহরের পরিবেশ আর খাবার তার সহ্য হতো না। প্রায় অসুস্থ থাকত। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামে ফিরে যাবেন। নিজেদের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করবেন। যে ভাবা সেই কাজ। ফিরে আসেন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই বাজারসংলগ্ন শিবপুর গ্রামে। শুরু করেন চাষাবাদ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন। তার মধ্যে রয়েছে কোয়েল, দেশি মোরগ, গরু পালন, জৈব সার উৎপাদন, ধান, সবজি, কলা ও মাছ চাষ, সরিষা সংগ্রহ করে তেল উৎপাদন, নারিকেলের চিড়া, আমসত্ত্ব, কুলের আচার তৈরি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তা বাজারজাত শুরু করেন। ফেসবুকে নিরাপদ খাদ্য যুদ্ধ নামের পেজ খুলেছেন। সেখানে পণ্যের বিষয়ে তথ্য জানান দেন। ক্রেতা তার পরিমাণ জানালে শহরে হলে সরাসরি ডেলিভারি এবং দূরে হলে কুরিয়ারে পাঠান।
শিবপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাজমা উঠানে গ্রামের নারীদের নিয়ে বসেছেন নারিকেল কুচি করতে। এদিকে তাজুল ইসলাম পণ্য ডেলিভারি দিয়ে এসেছেন। বসেছেন গুড়ের প্যাকেজিং করতে। তাঁকে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী নাজমা ও ছেলে মেয়ে।
নাজমা আক্তার বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের। তিনি দেশের বিভিন স্থানে ঘুরে ভালো পণ্য সংগ্রহ করেন। আমরা যা খাই তা ভোক্তাদেরও সরবরাহ করি। প্রথম দিকে এ কাজে নামলে কিছু প্রতিবেশী হাসাহাসি করতেন। বলতেন-লেখাপড়া করে কামলা হয়েছে। আমরা ভালো করায় পরে অবশ্য দেখতে আসেন। নিজে ভালোটা খাওয়া এবং অন্যকে সরবরাহ করাতেই আমাদের যত আনন্দ।
তাজুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে আমার স্ত্রীর ভূমিকা প্রধান। তিনিই প্রথম শুরু করেন। পরে এসে আমি যোগ দিই। আমরা ফার্ম থেকে সরাসরি ভোক্তার হাতে পণ্য তুলে দিই। কোনো মধ্যস্বত্ব ভোগী নেই। এতে ভোক্তা কম দামে ভালো পণ্যটা পান।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি অফিসার জোনায়েদ কবির খান বলেন, শিক্ষিত এ দম্পতির উদ্যোগ ব্যতিক্রম। তাঁদের মতো শিক্ষিত উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পণ্য পাবেন।