মানুষ এবং প্রাণিদের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতাল থাকাটইা স্বাভাবিক। কিন্তু নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে এবার সন্ধান মিলেছে ফসলের হাসপাতালের। যদিও বিষয়টি অবাক করার মতো। কিন্তু এমন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগে সেবা পাচ্ছেন নেত্রকোনার আটপাড়া অঞ্চলের হাজারো কৃষক। যেখানে কোন প্রাণী নয়, নিয়ে আসা হয় নানা রোগে বা পোকায় আক্রান্ত হওয়া ধানসহ বিভিন্ন জাতের সবজি, গাছ। এটি ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে সাড়া ফেলেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর। কিন্তু নাম লিখা ফসলের হাসপাতাল। ভেতরে হচ্ছে চিকিৎসা, কিন্তু তা কোনো প্রাণীর নয়। ধানসহ বিভিন্ন সবজি এবং গাছের রোগ বা পোকার আক্রমনে নষ্ট হওয়া ফসলের চিকিৎসা চলছে। যা নিয়ে আসেন কৃষক কৃষাণী।
এখানে গলায় ঝুলানো কোন স্টেথিস্কোপ বা সাদা এপ্রোন পরিহিত মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা কোন চিকিৎসক নন কেউ। এমনকি কৃষি বিভাগ থেকেও কেউ কোনো ডিগ্রীধারী নন। সকলেই স্থানীয় বয়স্ক কৃষক। কিন্তু তারা ফসলের হাসাতালের চিকিৎসক। ভালো করে নিরুপন করেন রোগ বালাইসহ পোকার আক্রমণ। দিচ্ছেন পরামর্শ। তারা নেন না কোনো পরামর্শ ফি, ভিজিট অথবা কোনো নিরীক্ষা ফিস।
নেত্রকোনা-মদন সড়কের আটপাড়া উপজেলার দূর্গাশ্রম চৌরাস্থায় অবস্থিত এই ফসলের হাসপাতালটি পরিচালনা করছে স্থানীয় কৃষকদের একটি সংগঠন দূর্গাশ্রম বাঘড়া হাওর কৃষক সমবায় সমিতি।
এই বিশেষজ্ঞ ফসলের চিকিৎসকরা জৈবসার ব্যবহার করে এবং কম কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে অন্যান্য কৃষকদের ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা কৃষি বিভাগ ও ধান গবেষণাকারী সংস্থা বারসিকের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করে মাসিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে মোট ২৭ জন এই হাসপাতাল পরিচলনা করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০ জনের মতো কৃষক আসেন পারমর্শ নিতে। অনেকের সাথে বিভিন্ন ফসলের জমিও তারা পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) নেত্রকোনার সমন্বয়কারী পরিবেশবিদ মো. অহিদুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে সম্পদ তৈরী করে সমাধান দিচ্ছেন। এতে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকছে। ব্যাঙ পাখি সাপ বাড়ানোর কাজটি করে যাচ্ছেন তারা। এটি একটি উদাহরণ হতে পারে দেশব্যাপী। পরিবশেগত সঙ্কট মোকাবেলায় কাজ হবে। তারা গত ৬ বছর ধরে একটি উপজেলার ১১ টি গ্রামের ৯৮৭ জন কৃষক কৃষাণীকে ফসলের চিকিৎসা দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (খামারবাড়ি) উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আইপিএমের উপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে বিষমুক্ত ফসল চাষে তারা কাজ করছেন। তারা বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে এমন উদ্যোগে সাড়া ফেলেছেন। তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কৃষকদের সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রমটি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দেখে অন্যান্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা উদ্বুদ্ধ হবেন বলে তিনি আশা রাখছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল