প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভবনগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন অভ্যন্তরীণ সজ্জা (ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন) ও অনুমোদনহীন সংস্কারকাজে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সরকার। সম্প্রতি সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসা ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সরকার মনে করছে, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) হিসেবে সচিবালয়ের নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। অথচ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে যেভাবে অভ্যন্তরীণ সজ্জা, বৈদ্যুতিক পরিবর্তন এবং সংস্কারকাজ পরিচালনা করছে, তা পুরো ভবনগুলোর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি জানতে পারে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর একক সিদ্ধান্তে করা ‘সৌন্দর্যবর্ধন’ ও অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজেই অধিকাংশ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছিল। তদন্তে আরও উঠেছে, অনেক মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে বৈদ্যুতিক তার টানায়, যেখানে নিরাপত্তা মানদণ্ড মানা হয়নি। নির্মাণে ব্যবহৃত পার্টিশনসহ বিভিন্ন সাজসজ্জার উপকরণ ছিল অত্যন্ত দাহ্য। একাধিক স্থানে অতিরিক্ত লোডের কারণে বৈদ্যুতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এসব কাজের ফলে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ও কাঠামোগত স্থিতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্বাধীনভাবে পরিচালিত অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, সংস্কার ও বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক স্থাপন- অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। একান্তই প্রয়োজন হলে শুধু প্রথম শ্রেণির ফায়ার রেটেড উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। অনুমোদনহীন বৈদ্যুতিক তার টানা, বিভাজন তৈরিসহ যে কোনো পুনর্গঠন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে এমন কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিনিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সব অননুমোদিত সাজসজ্জা ও সংস্কারকাজ বন্ধে কঠোর হতে হবে। সচিবালয় প্রশাসন জানায়, এসব ব্যবস্থা কেবল আগুন প্রতিরোধের জন্য নয়; ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা ও সামগ্রিক সুরক্ষা বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য। প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে সচিবালয়ের প্রতিটি ভবনে উচ্চমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য।