খাদ্যশস্যে প্লাজমা ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে খনিজ পদার্থ যুক্ত করার এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। এতে শস্যকে এক ধরনের প্লাজমা (আয়নিত গ্যাস) ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের (ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান) সংস্পর্শে এনে খনিজের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়, যা কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন সফলতার মাত্রা যুক্ত করেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল অব প্লান্ট গ্রোথ রেগুলেশন (স্প্রিংগার), হেলিওন (এলসেভার) ও প্লাজমা মেডিসিনে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি করেন রাবির ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের পিএইচডি গবেষক মো. মামুনুর রশিদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মামুনুর রশিদ তালুকদার। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি পুষ্টি ঘাটতি ও লুকানো ক্ষুধা নিরসনের বৈপ্লবিক সমাধান হতে পারে।
গবেষক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্লাজমা সোর্স বিশেষ করে গ্লাইডিং আর্ক ডিসচার্জ প্লাজমা, ডাইইলেকট্রিক ব্যারিয়ার ডিসচার্জ প্লাজমা, গ্লো ডিসচার্জ প্লাজমা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। শস্যের বীজ ট্রিটমেন্ট ও প্লাজমা সক্রিয় পানি প্রয়োগে এ সোর্সগুলো ব্যবহার করা হয়। এতে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও ফসলের উৎপাদন হার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কম সময়ে ফসল সংগ্রহ ও রোগবালাই দমনে এ পদ্ধতি কার্যকর।’
গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাজমা ট্রিটমেন্টে ধানে ৫৯, আলুতে ২০৪ ও বেগুনে স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৮ শতাংশ জিঙ্কের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এমনকি এতে ধান উৎপাদন প্রক্রিয়া ১৫-২০ দিন আগেই শেষ হয়। গম, ভুট্টা ও সবজিতেও এ প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে।
অধ্যাপক মামুনুর রশিদ তালুকদার বলেন, ‘২০১৫ সালে প্রথম কৃষি ক্ষেত্রে প্লাজমা টেকনোলজির সফলতা আসে। এ পদ্ধতিতে এবার খাদ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ফোর্টিফিকেশনে প্লাজমার প্রয়োগ ও ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এতে খাদ্যে নিউট্রিয়েন্টের পরিমাণও বেড়েছে। ফলে খাদ্যের চাহিদা ও পুষ্টিগুণ উভয়ই বাড়ানো সম্ভব। তবে এ প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে যে বাজেট প্রয়োজন তা যথেষ্ট নয়।’