বিভিন্ন দেশের চিন্তাবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক ও গণমাধ্যমব্যক্তিত্বদের নিয়ে শুরু হয়েছে ভূরাজনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংলাপ বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এতে বক্তারা বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নেবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ। ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন ও পুনর্গঠন’ স্লোগানে এবারের সংলাপে ৮৫টি দেশের ২০০ জন আলোচক, ৩০০ জন বিদেশি ডেলিগেট এবং এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি ডেলিগেট অংশ নিচ্ছেন। আয়োজনের প্রথম দিনে চারটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেশনে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ক্যারোল ক্রিস্টিয়ান ফেয়ার, চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির পরিচালক ইয়ানজি রেন, জার্মানির মার্কাটোর ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ফেলো লিও উইগার, অস্ট্রেলিয়ার মেরিটাইম ফ্রন্টিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা জসুয়া আলেক্সান্ডার ব্রেইন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি আ ন ম মুনীরুজ্জামান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহসহ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল ও মালয়েশিয়ার আলোচকরা অংশ নেন। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময়ে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আমরা দৃঢ়ভাবে অংশ নেব, প্রয়োজন হলে স্পষ্টভাবে বলব এবং সব সময় জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর রেখে কার্যকর অংশীদারত্ব গড়ে তুলব। পুনর্গঠনের সময় অনেক রাষ্ট্র পক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের উচিত প্রথমে সঠিক পথ বেছে নেওয়া।’ তিনি বলেন, ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রভাব কূটনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ তথ্যক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখতে চায়। একই সঙ্গে এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, যা নিরাপত্তা ও অধিকার দুটোই রক্ষা করবে। তৌহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগর এখন কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। সেখানে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভূমিকা রাখতে চায়, নিছক করিডর হয়ে নয়। বঙ্গোপসাগরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পারস্পরিক সুযোগ ও স্থিতিস্থাপকতার ভিত্তিতে যোগাযোগ ও অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে। সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের পরিকল্পনা করা সবচেয়ে সহজ কাজ, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। দেশ, মানুষ, অংশীজন- সবার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সংস্কারের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে অলসতা ঝেড়ে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন ঠিক এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার বাস্তবায়নের কোনো গাইড বই নেই। সে কারণে সংস্কার প্রক্রিয়া শক্তিশালী, সুসংগত ও বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশকে নিজস্ব পথ খুঁজে নিতে হবে।