অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটা অপেক্ষা করছে, তা হলো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এবারের নির্বাচন হবে ইতিহাস সেরা। আগামী সব নির্বাচনের জন্য অনুকরণীয় মডেল। গত তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে যারা ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা নিঃশঙ্কচিত্তে ভোট দেবেন। কেন্দ্রে সৃষ্টি হবে ঈদের দিনের মতো আনন্দমুখর পরিবেশ। তাঁর আশাবাদ ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গণতান্ত্রিক উত্তরণে আগামী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি, তদারকি ও পেশাদারি দায়িত্ব পালন, ভোটে সব রকম অনিয়ম-অরাজকতা, অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা প্রতিহত করবে। নির্বাচন বিতর্কিত করার বিশৃঙ্খলা-নাশকতা, দৌরাত্ম্য-দখলদারি নস্যাৎ করে দেবে। জাতি সেটাই চায়। বাঁকা পথে জয় ছিনিয়ে ক্ষমতায় বসার দিন আজ অতীত। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার পতনের সঙ্গেই ওই অপচর্চার কবর রচিত হয়েছে। গত ১৫ মাসে যে সংস্কার ও বিচারের কর্মযজ্ঞ চলছে, ইতোমধ্যে তার ফলাফল পাওয়া শুরু হয়েছে। মানুষ তা দেখছে। দৌর্দন্ড প্রতাপশালী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদন্ড হয়েছে। এমনটা হতে পারে, তা কারও ভাবনা-কল্পনায়ও ছিল না। অথচ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায়ই তা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে প্রত্যেককেই কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। সব প্রধান দলের সম্মতিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়েছে। নির্বাচনও সেভাবেই হবে। গণ অভ্যুত্থানে গণমানুষের মধ্যে গণজাগরণ ঘটেছে। যে কোনো জাতীয় সংকটে পথে নেমে আসার সাহস তৈরি হয়েছে। মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে দেড় হাজার স্বজন হারিয়ে, হাজার হাজার মানুষের অন্ধত্ব, পঙ্গুত্বের মর্মান্তিক নিপীড়ন দেখে; জাতির শিক্ষা হয়েছে। গণতন্ত্রের অর্থ উপলব্ধি করতে শিখছে। এখন তাদের আর মিষ্টিকথার ভুয়া আশ্বাসে ভোলানো যাবে না। আর কোনো স্বৈরাচার সৃষ্টির সুযোগও তারা করে দেবে না। সচেতন নাগরিকরা সততা-নিষ্ঠা এবং দেশ ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ জনপ্রতিনিধি ও সরকার নির্বাচন করতে চাইবে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নির্বিঘ্ন, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর ভোট হোক। তার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রায় নিয়ে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাক। শক্ত বিরোধী দল থাক। দেশটা সোজা পথে চলুক।