সংবিধান সংশোধনীর নতুন প্রস্তাব বিতর্কের সৃষ্টি করবে বলে মনে করে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বামপন্থি ছয়টি দল। তারা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ (ক) বিলুপ্তির প্রস্তাবটি ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ অন্তর্ভুক্ত করাসহ এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ (ক) বিলুপ্তির প্রস্তাবটি ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মতামত চেয়ে কমিশনের পাঠানো চিঠির জবাবে এমনটি বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ’ এর সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবিত সুপারিশে রাজনৈতিক দলসমূহ এর অধিকাংশ সুপারিশে সর্বসম্মত একমত হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দলসমূহের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও দলসমূহের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। এরপর কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের স্বাক্ষরে দলগুলোকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ ৪ (ক) বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।’ অথচ গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সভায় কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, জাতীয় সনদে আর কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করা হবে না। সে অনুযায়ী কোনো দল সনদের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে কোনো আলোচনা না করলেও খোদ কমিশনের পক্ষ থেকেই নতুন বিষয়ে দলগুলোর মতামত চাইছে। এটা কমিশনের পূর্বেকার সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জুলাই সনদে সংবিধান সংশোধনীর নতুন প্রস্তাব যুক্ত না করার আহ্বান জানিয়েছে বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, বাসদ (মাহবুব), বাংলাদেশ জাসদসহ কয়েকটি দল। এ ছাড়া আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ওই অনুচ্ছেদটি সম্পূর্ণ বিলোপের পরিবর্তে ইতিহাস ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সংশোধনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেছে। বাসদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর একটি রিট মামলায় উচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বিষয় আগামীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে নির্ধারিত হবে। আমাদের দলও তা সঠিক বলে মনে করি।’ সংবিধানের এক অনুচ্ছেদ নিয়ে ইতিপূর্বে কোনো সভায় আলোচনা হয়নি, অথচ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(ক) এর মত স্পর্শকাতর বিষয়ের বিলুপ্তির প্রস্তাব নতুন করে জটিলতা ও বিতর্কের অবতারণা করবে। আমরা কমিশনকে এই প্রস্তাব থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
বাসদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা বিদ্যমান সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব থেকেও কমিশনের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয় মনে করি। আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করতে চাই। তার জন্য উপরোক্ত বিষয়সমূহের ব্যাপারে কমিশনের যথাযথ পজিটিভ পদক্ষেপ আশা করি। অন্যথায় আমাদের দলসহ অনেক দলের পক্ষে সনদে স্বাক্ষর করা হয়তো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে আরও বলা হয়, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার দেশকে নৈরাজ্যকর অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। তা থেকে মুক্তির জন্যই ছাত্র শ্রমিক জনতা ২০২৪ সালে গণ অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি বাদ দেওয়াকে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস বলে দেশবাসী ভাবতে পারে, যা দেশকে নতুন করে বিভাজনের রাজনীতির ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া দেশের মানুষ বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলের দুর্নীতির বিচারের অগ্রগতি নিয়ে যেমন আশাবাদী হতে পারছে না, তেমনি বর্তমান সময়ের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়েও খুবই উদ্বিগ্ন। ফলে নতুন বিতর্ক তৈরি না করে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া সুপারিশ বাদ দিয়ে, যে সব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও সবার স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করুন।