আকস্মিক বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমি ধসে বিধ্বস্ত দার্জিলিং, কালিম্পংসহ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পাঁচ জেলা। এখন পর্যন্ত এতে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় সোমবার উত্তরবঙ্গে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বেদড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন বিজেপির সংসদ সদস্য ও বিধায়করা। কাউকে মেরে রক্তাক্ত আবার কাউকে জুতাপেটা করা হয়েছে। দুর্যোগের পর সোমবার বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, সংসদ সদস্য খগেন মুর্মুসহ বিজেপির প্রতিনিধিদল। বামনডাঙা নামক এলাকার কাছে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। এ সময় শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের গাড়ি ভাঙচুর এবং পাথর, জুতো, লাঠি ছোড়া হয়। ইট, পাথরের ঢিলে গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তাঁদের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলতে বিজেপির নেতারা গাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলে তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে মাথা ফেটে যায় বিজেপি সংসদ সদস্য খগেন মুর্মুর। রক্তে সারা মুখ ভিজে যায় তাঁর। পেছন থেকে জুতোপেটা করা হয় বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে। হামলাকারী কারা, কোনো দলের সমর্থক কি না, এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। বিক্ষোভের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন বিজেপি বিধায়ক-সংসদ সদস্যরা। শঙ্কর ঘোষ ও খগেন মুর্মু, কোনোক্রমে পালান পরিস্থিতি থেকে। সঙ্গে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও আটকানো যায়নি আক্রমণ। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিজেপির নেতারা। বিজেপির অভিযোগের এমন প্রাণঘাতী আক্রমণ পরিকল্পিত। এর পেছনে রয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও বিজেপির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
তাদের পাল্টা দাবি বিজেপি নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই নিজেরা নিজেদের টার্গেট করতে শুরু করেছে। এদিকে আক্রান্ত বিজেপি সংসদ সদস্য ও বিধায়ককে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চালসার সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ছাড়া খগেন মুর্মুর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে জানা যাচ্ছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার দাবি ‘কোনো রকম প্রমাণপত্র, আইনানুগ কোনো তদন্ত এবং কোনো প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন। এটা শুধু রাজনৈতিক নিম্নতা স্পর্শ করল না, যে সাংবিধানিক নৈতিকতা তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, সেই নৈতিকতারও লঙ্ঘন হলো।’
এমনকি মণিপুর ইস্যুতেও মোদিকে নিশানা করে টুইটে মমতা লেখেন ‘যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি-হিংসা শুরু হওয়ার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই উদ্বেগ কোনো সমবেদনার পরিচয় নয়। বরং এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে।’
মোদিকে মমতার পরামর্শ ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কথা শুনুন, শুধু নিজের দলের লোকের কথা শুনবেন না। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নন। আপনার দায়িত্ব দেশ নির্মাণ করা, কাহিনি নির্মাণ করা নয়। সংকটের এই মুহূর্তে, আমরা যেন বিভাজন না বাড়াই। মানুষের সেবায়, দলীয় লাইনের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের একত্র হতে হবে।’
মোদি-মমতার এই টুইট যুদ্ধে উত্তাপ ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। বিজেপি নেতাদের ওপর হামলা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূলকে নিশানা করে মোদির টুইটের পর গতকাল সকাল থেকেই বিজেপি নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে উত্তরবঙ্গে। পাশাপাশি দলমতনির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই হামলার ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন।