পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। আকাশে উড়ানো হয়েছে রঙ-বেরঙের অসংখ্য ফানুস, যা রাতের আকাশকে ঝলমল করে আলোকিত করেছে। দূর থেকে তাকালে মনে হবে, আকাশে অসংখ্য তারা ঝিলমিল করছে, যার মধ্যে কয়েকটি খসে পড়ছে নিচে।
রাখাইন সম্প্রদায়ের ২৮টি পাড়া থেকে একযোগে শতাধিক ফানুস উড়ানো হয়। উড়ানো ফানুসের ঝিলমিলিতে আকাশচুম্বি দৃশ্য তৈরি হয় এবং এই উৎসব দেখার জন্য রাখাইন পল্লীর আশপাশে স্থানীয় ও পর্যটকরা ভিড় করেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, ফানুস উড়ানো কেবল উৎসব নয়, এটি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিক পর্যন্ত বর্ষাব্রত পালন করা হয়। তিন দিনব্যাপী বৌদ্ধ বিহারে আচার-অনুষ্ঠান, বুদ্ধের স্মরণে প্রার্থনা এবং ফল ও পিঠাপুলি প্রদানের আয়োজন করা হয়।
রাখাইনরা প্রতিদিন পরিষ্কার পোশাকে বিহারে গমন করে। পাড়া-প্রতিপাড়ায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা নতুন পোশাক পরিধান করে বিহারে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা পঞ্চশীল ও অষ্টশীল প্রার্থনা করেন এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বিভিন্ন ফল ও পিঠাপুলি প্রদান করেন।
রাখাইন মংচো ওয়েন বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা আত্মশুদ্ধি, অশুভকে ত্যাগ এবং সত্য ও সুন্দরকে বরন করার দিন। ফানুস উড়ানো এখন সার্বজনীন উৎসব, যেখানে সব বয়স ও ধর্মের মানুষ মিলিত হয়।”
রাখাইন যুবক চোতেন মাতুব্বর জানান, “আলোসজ্জা, নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবারের সঙ্গে বিহারে অংশ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ একমাস ধরে দেড় শতাধিক ফানুস তৈরি করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আকাশে উড়ানো হবে।”
কুয়াকাটার শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধাক্ষ্য ইন্দ্র বংশ ভান্তে বলেন, “২৮ বুদ্ধের আসন পরিস্কার ও নতুন সাজে রূপদান করা হয়েছে। কঠিন চীবর দান এবং শতাধিক ফানুস উড়িয়ে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।”
মিশ্রীপাড়া সিমা বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি মংলাচি তালুকদার বলেন, “এ উৎসব আমাদের অন্যতম আনন্দময় অনুষ্ঠান। জগতের সবার মঙ্গল কামনা করি।”
উত্তম ভিক্ষু জানান, “প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে বৌদ্ধ ধর্মে বর্ষাবাসের সঙ্গে প্রবারণা উৎসব পালন করা হচ্ছে। এই উৎসবে সবাইকে সুস্বাস্থ্য, শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।”
কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম জানান, উৎসব নির্বিঘ্ন ও নিরাপদভাবে পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ জানান, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দ এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক