প্রকৃতির অন্যতম উপকরণ পাখপাখালি। বনবাদাড়ে, গাছের ডালে নানান রংবেরঙের পাখির দেখা মেলে। দেশের চিরচেনা এ প্রকৃতির অন্যতম আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ ‘কমলা দামা’ পাখি। দৃষ্টিনন্দন শান্তিপ্রিয় পাখিটি মন কাড়ে এক নজরেই। আকারে ছোট, দোয়েল প্রজাতির এ পাখি অনেকটা লাজুক প্রকৃতির। কেউ কেউ একে ছদ্মবেশী পাখিও বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Zoothera citrina.
পাখিটিকে কমলাফুলি, কমলা দোয়েল, কমলা বউ বা গায়ক পাখিও ডাকা হয়। কমলা দামা লম্বায় ২১ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৬০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি, ঘাড় ও বুকের রং গাঢ় কমলা। তাতে আছে হালকা হলুদের ছোঁয়া ও লালচে আভা। পেট ও লেজের নিচের দিকটা সাদা। পিঠ ও লেজের ওপরটা নীলচে-ধূসর। ডানার প্রান্তে রয়েছে কয়েকটি সাদা দাগ। কমলা রঙের শরীরে নীলচে-ধূসর ডানায় অপরূপ এ পাখি। স্ত্রী কমলা দামা দেখতেও একইরকম। তবে বুকের রং একটু ফিকে এবং পিঠ ও লেজ ছাইরঙা। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই ঠোঁট কালচে; পা ও আঙুল হালকা গোলাপি।
কমলা দামা মানুষের চোখের আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। এদের পাওয়া যায় গ্রামীণ ঝোপ-জঙ্গল, বন-বাগান বা বাঁশঝাড়ের স্যাঁতসেঁতে নির্জন পরিবেশে। জোড়াপায়ে ছোট ছোট লাফ দিয়ে এরা ঘুরে বেড়ায়। মাটিতে পড়ে থাকা পাতা উল্টে পোকামাকড়, কেঁচো খায়। ফলও খেতে পারে।
কমলা দামা পাখিটিকে কৃষকের খেতের পাহারাদারও বলা হয়। গ্রীষ্মকালে পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব যখন বেড়ে যায়, তখন এরা দল বেঁধে উড়ে এসে খেতকে পোকামুক্ত করে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও এদের ভূমিকা অনন্য। বৃষ্টির মৌসুম শেষে যখন মাঠে ধান পাকে, তখন কমলা দামার উপস্থিতিও বাড়ে। শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে খাদ্য সংগ্রহেও বের হয় দেশি এই কমলা দামা।
এরা সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ঝোপঝাড় বা খেতের পাশের ছোট গাছে বাসা বাঁধে। ছোট, খড়কুটো, শুকনো ঘাস আর নরম পাতা দিয়ে বাসাগুলো তৈরি করে। স্ত্রী পাখি একসঙ্গে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। পাখিটি কেবল প্রকৃতির অংশ নয়, গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও।