সুলভ আবাসিক পাখি বড় কুবো। বনাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে এদের বেশ দেখা যায়। বর্তমানে বনাঞ্চল কমে যাওয়া ও নগরায়ণের কারণে আগের মতো দেখা যায় না। বাংলাদেশে দুই প্রজাতির কুবো আছে। বাংলা কুবো ও বড় কুবো। অঞ্চলভেদে এ পাখি কানাকুয়া, কুক্কা ও কুকো নামে পরিচিত। তবে আমাদের গ্রামীণ জনপদে কানাকুয়া নামেই বেশি চেনে।
বাংলার লোকসংস্কৃতিতে বড় কুবো পাখির ডাক নিয়ে মানুষের মনে নানা বিশ্বাস রয়েছে। কেউ মনে করে, এ পাখি ডাকলেই বৃষ্টি হয়। আবার কিছু অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, এ পাখির ডাক শোনা মানেই অশুভ সংকেত। যদিও এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এ-জাতীয় মিথ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
এরা কোকিল পরিবারের সদস্য হলেও তাদের মতো পরজীবী নয়। কোকিল যেমন অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে; কানাকুয়া নিজে বাসা বানিয়ে ডিম দেয়। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি পাখির গ্রাম থেকে এর ছবি তুলেছেন প্রকৃতিপ্রেমী ও শিক্ষক বখতিয়ার হামিদ।
কুবো মাঝারি গড়নের ভূচর পাখি। স্ত্রী-পুরুষ উভয় জাতের পাখিই দেখতে একই রকম। বড় কুবো কালো ও তামাটে রঙের লম্বা লেজওয়ালা হয়ে থকে। দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার। পিঠ তামাটে ও দেহতল চকচকে কালো। উজ্জ্বল তামাটে কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই কালো। চোখ লাল, ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। বড় কুবো আলোকময় বন, বাগান ও মানববসতির কাছাকাছি বাস করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। মাটিতে ধীরে ধীরে হেঁটে শিকার খোঁজে।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। এ সময় ঘন ঝোপ, বাঁশবন ও খেজুর গাছের আগায় বাসা বাঁধে। ৩-৫টি ডিম পাড়ে। রং সাদা। ১৫-১৬ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ১৮-২২ দিন বয়সে ছানা উড়তে শেখে।
বখতিয়ার হামিদ বলেন, একসময় গ্রামে বেশ চোখে পড়ত এ পাখি। এখন অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। নগরায়ণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার আর খাদ্য চক্রের ভারসাম্যহীনতার কারণে আজ কানাকুয়াও বিপন্ন হওয়ার পথে। শহরের ইটপাথরের জঞ্জালে অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে।