অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ডে উন্মোচিত হল কোটি বছরের এক বিস্ময়। খামারবাড়ির জমি খুঁড়তে গিয়ে মিলেছে সাড়ে পাঁচ কোটি বছরের প্রাগৈতিহাসিক কুমিরের ডিমের খোসা; যে কুমির শুধু গাছে চড়তই না, গাছের ডাল থেকে ঝাঁপিয়ে শিকারও ধরত!
এই বিলুপ্ত সরীসৃপগোষ্ঠীর নাম মেকোসুচিন কুমির। চার দশক আগে যে জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই প্রায় ৪২ বছর পর এই গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম উদ্ধার করেছেন আন্তর্জাতিক জীবাশ্মবিদদের যৌথ দল। গবেষকদের দাবি, এ হল এখন পর্যন্ত পাওয়া মেকোসুচিন কুমিরের সর্বাধিক প্রাচীন নিদর্শন।
স্পেনের বার্সেলোনার ‘ইনস্টিটিউট ক্যাটালা ডি প্যালিওন্টোলজিয়া মিকেল ক্রুসাফন্ট’-এর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে, এই প্রাগৈতিহাসিক কুমিরেরা প্রায় ৫ মিটার লম্বা হত। এদের শরীরের গঠন ও নখর এমন ছিল যে সহজেই গাছে চড়তে পারত। শুধু তাই নয় গাছের ডাল থেকে ঝাঁপিয়ে শিকার ধরতেও ছিল একেবারে ওস্তাদ। গবেষকেরা এদের ডাকছেন, ‘ড্রপ ক্রোক’।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষকদলের সদস্য মাইকেল আর্চারের কথায়, এরা অনেকটা চিতাবাঘের মতো আচরণ করত। জঙ্গলের মধ্যে উপযুক্ত সুযোগ পেলেই গাছের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরত। অনেক ‘ড্রপ ক্রোক’ দীর্ঘ সময় গাছেই কাটাত বলে অনুমান।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় মেকোসুচিন কুমিরের জীবাশ্ম মিললেও সেগুলি তুলনায় কম বয়সী; প্রায় আড়াই কোটি বছরের। নতুন আবিষ্কৃত ডিমের খোসা বিজ্ঞানীদের কাছে যেন টাইম ক্যাপসুল, যা এই প্রাচীন কুমিরের অভিযোজন ক্ষমতা ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে।
জীবাশ্মবিদদের মতে, বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার লবণাক্ত ও মিষ্টি জলের কুমির প্রজাতির আগমন প্রায় ৩৮ লক্ষ বছর আগের। কিন্তু তার বহু বহু আগে, অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে অবাধে বিচরণ করত এই গাছে চড়া রহস্যময় কুমিরেরা। সম্ভবত এদের শেষ প্রজাতি পৃথিবীর বুকে দেখা গিয়েছিল আজ থেকে মাত্র তিন হাজার বছর আগে।
‘জার্নাল অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি’-তে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, এই নতুন ডিমের খোসাগুলি শুধু অস্ট্রেলিয়ার প্রাগৈতিহাসিক জীববৈচিত্র্যই নয়, সরীসৃপদের বিবর্তন ইতিহাসও নতুন করে দেখার সুযোগ দেবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল