আলু আবাদ করে গেল মৌসুমে কৃষক, ব্যবসায়ীদের লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে কোমর ভেঙেছে। অনেকে লোকসানের ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না- এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। এই সংশয়ের মধ্যেই উত্তরবঙ্গের রংপুর ও বগুড়ার কৃষকরা আলু চাষে মাঠে নেমেছেন। এবার রংপুরের পাঁচ জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে আলুর আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৯ হেক্টরে। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এবার কৃষি অফিস আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭০০ হেক্টরে। আর বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্থানীয় এবং উচ্চ ফলনশীল মিলে ৪৮টি জাতের আলুর আবাদ হয় বগুড়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় এস্টারিক্স (স্থানীয়ভাবে স্টিক নামে পরিচিত) নামে উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু। গত বছর জেলায় ৫৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭০ হাজার মেট্রিক টন। বগুড়া জেলার সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখন আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
রংপুরের কৃষকরা জানান, এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলুর বীজ লাগে ২৪ হাজার টাকার। রোপণ, সার, উত্তোলন ইত্যাদির খরচ পড়ে ১৯ হাজার টাকা। এক দোন জমিতে মোট খরচ হয় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি। সেই হিসাবে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। হিমাগারে কেজিপ্রতি আরও যোগ হবে ৮ টাকা। সব মিলিয়ে দেখা গেছে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২৬/২৮ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১৫/২০ টাকায় আলু বিক্রি হলেও পাইকারি এবং হিমাগার গেটে দাম এর অর্ধেক।
এদিকে সরকার আলু চাষিদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হিমাগারের গেটে আলুর বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২২ টাকা নির্ধারণ করে ক্রয় করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী ২২ টাকা কেজি দরে সরকারিভাবে কোনো আলু কেনা হয়নি। ফলে কৃষকদের লোকসান কমানো সম্ভব হয়নি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় সার-কীটনাশকসহ বিভিন্ন খাতে বেশি খরচ করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্তমান বাজার দর হিসেবে কৃষকরা মোটা অঙ্কের লোকসান গুনছেন।
এদিকে বগুড়ার হিমাগার মালিকরা বলছেন, হিমাগার থেকে আলু বের না হলে, হিমাগার মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। জেলায় বেশির ভাগ হিমাগারে প্রায় ৪০ শতাংশ আলু পড়ে রয়েছে। সেই আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা উত্তোলন করছেন না। এরই মধ্যে চাষিরা আবারও আলু চাষে মাঠে নামছেন। গত বছর বগুড়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে লাভের আশা করছিলেন। সেই আশা এখন দুরাশায় পরিণত হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এ বছর আলু চাষ নিয়েও নানা শঙ্কায় আছেন তারা।