রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। গতকাল বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা দুটি এক্সকেভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরই শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কলাবাগান, সোবহানবাগ ও পান্থপথসহ আশপাশ এলাকায় চলতে থাকে থেমে থেমে সংঘর্ষ। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের তিনটি গাড়ি। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধানমন্ডিজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সংঘর্ষ শুরুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া মিরপুর সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শেখ মুজিবের বাড়িটির সামনে বেরিকেড দিয়ে রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা কলেজের সামনে থেকে রওনা দিয়ে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ধ্বংসবাশেষ পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিতে যায় একদল বিক্ষোভকারী। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরপর ঘটনাস্থলে যোগ দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দুপুরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হলে বিক্ষোভকরীরা ফের সংঘটিত হয়ে বাড়িটির ভিতরে ঢুকতে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিলে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় আশপাশের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশ এলাকা, কলাবাগান, পান্থপথ ও সোবহানবাগে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতা পুলিশকে উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেয়। এ ছাড়া একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর, ৩৬ না ৩২, ৩৬-৩৬, ৩২-এর ঠিকানা এই বাংলায় হবে না-সহ নানা স্লোগান দেয়। তিন দিক দিয়ে ছাত্র-জনতা আবার বাড়ি ভাঙতে গেলে সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করে। পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে সাউন্ড গ্রেনেড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রোগী এবং স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অলিগলির সড়কেও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। বাসিন্দাদের মধ্যেও চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। পুলিশের ফোর্স বহনকারী গাড়িকে উদ্দেশ করে ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জিসানুল হক বলেন, আমরা কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না। এ জন্য ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ওই বাড়ির অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই ভাঙা বাড়ি ঘিরেই ওই সড়কে নিরাপত্তাব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার।