আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ডসহ পাঁচ ধরনের রিটেইল সেবা বন্ধ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো, ভবন আধুনিকায়ন এবং উন্নত ভল্ট সুবিধা তৈরির অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ৩০ নভেম্বর থেকে এসব রিটেইল সেবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল সদর দপ্তর ও অন্যান্য শাখায় বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে এবং দ্রুতই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে ১০ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র আদান–প্রদান, প্রাইজবন্ড বিক্রি, ত্রুটিযুক্ত নোট বিনিময়, পিএডি আদান–প্রদান এবং চালানের ভাংতি—এই পাঁচটি সেবা বন্ধ হবে। এ জন্য ব্যবহৃত ১২টি কাউন্টারও বন্ধ থাকবে। তবে দাপ্তরিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড বা চালান–সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ কাউন্টার চালু থাকবে।
গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ২২ জুন গভর্নর মূল ভবনের ক্যাশ বিভাগ পরিদর্শন করে কয়েকটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলে ধরেন। পরে গঠিত কমিটি সেপ্টেম্বরের অগ্রগতি সভায় প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবন কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালার আওতায়। একই ভবনে মুদ্রা ইস্যু–বিতরণ, ভল্ট কার্যক্রম, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং তদারকির মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর কাজ হয়। সেখানে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত উপস্থিতি নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অতীতে রিজার্ভ হ্যাকিং, সঞ্চয়পত্র জালিয়াতি, ভবনের ভেতর ছবি–ভিডিও ধারণ এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রির মতো সেবা সহজেই দেশের ৬০টির বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে দেওয়া যায় এবং বিশ্বের কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি জনগণকে রিটেইল সেবা দেয় না। তাই এই সেবা বন্ধ হলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে না।
তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ হলেও আগে ইস্যু করা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তির আগ পর্যন্ত সব সেবা চালু থাকবে। মেয়াদপূর্তির পর এসব সঞ্চয়পত্র পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে না। পুরোনো সঞ্চয়পত্রের হিসাব পরিবর্তন, মোবাইল নম্বর হালনাগাদ, নমিনি সংযোজন বা পরিবর্তন, ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনির মাধ্যমে পরিচালনা, আগাম নগদায়ন এবং আইনগত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল