দেশের বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক তাদের কার্যক্রম ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর বা সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে, আবার কেউ ইসলামিক উইন্ডো ও শাখা বাড়ানোর আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাঁচটি দুর্বল ইসলামিক ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত এবং ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়া ব্যাংকগুলোর সংকটের পর নতুন করে ইসলামি ব্যাংকিং সম্প্রসারণে আগ্রহ বেড়েছে ব্যাংকগুলোর। তারা আরও জানান, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস (এনসিসি) ব্যাংক ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক ব্যাংকে রূপান্তরের জন্য আবেদন করেছে। নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর এখন সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া এনআরবি ব্যাংক এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তারা এখনো বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দেয়নি। অন্যদিকে পুবালী ব্যাংক ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি পূর্ণাঙ্গ রূপান্তরের বদলে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণের জন্য আলাদা উইন্ডো ও শাখা খোলার আবেদন করেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে অনেক মানুষ সুদ এড়িয়ে চলতে চান। লাভ-ক্ষতি ভাগাভাগির নীতির ওপর পরিচালিত হওয়ায় ইসলামিক ব্যাংকিং সাধারণ মানুষের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০২১ সালে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশির ভাগ ইসলামিক ব্যাংক বড় ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও তারল্যসংকটে পড়ে জনগণের আস্থা হারিয়েছে। অনেক ব্যাংক আমানত ফেরত দিতে না পেরে গ্রাহক হারিয়েছে, যারা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক জানালায় ঝুঁকেছেন। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ১০টি ইসলামিক ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বড় আকারে কার্যক্রম চালালেও বেশির ভাগই অনিয়মে জর্জরিত ছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ইসলামিক ব্যাংকের পতনের কারণ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং পদ্ধতি নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দখল। তার মতে, স্বনামধন্য প্রচলিত ব্যাংক যদি ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে আসতে চায়, তাহলে জনগণের চাহিদার কারণে তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অনুমোদন দিতে হবে আবেদনকারী ব্যাংকের অতীত রেকর্ড, সুশাসন ও সেবাদানের সক্ষমতার ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকগুলো ৪১টি ইসলামিক শাখা ও ৯১৯টি উইন্ডো পরিচালনা করছে।