বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘গণহত্যা মামলার’ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও কৃষক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদির পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যে ট্রায়াল হয়েছে সোমবার তার রায় বের হবে। এটা নিয়ে সারা দেশে এক ধরনের চরম অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে একটি মহল আবারও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এসব নৈরাজ্য রুখে দাঁড়াতে হবে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিভ্রান্তিকর ও অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি এক ধরনের ‘কনফিউজড পলিটিক্সে’ চলে গেছে। এমন সব ঘটনা ঘটছে, এমন সব উপাদান ঢুকছে, যা দেশের মানুষ আগে কোনো দিন চিন্তাই করেনি। এগুলো বাংলাদেশের আত্মা নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ এক জটিল সংকটের মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নামে যারা এসেছে, তারা রাজনৈতিক কাঠামোটাকে একটা জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করেছে। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেটি এখনো বলা যায় না।
বিএনপির অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মহাসচিব বলেন, আমরা বারবার বলেছি- নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র পথ, যা দিয়ে ট্রানজিশন করে গণতন্ত্রে যাওয়া সম্ভব। কিছু গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে। নানান দাবি তুলে তারা নির্বাচন ব্যাহত, বিলম্বিত বা বন্ধ করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ এখন চায় একটি নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে। নির্বাচন না হলে আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও খারাপ। নির্বাচিত সরকার না থাকলে তা আরও অবনতির দিকে যাবে।
আজকের রায় ঘিরে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, গণহত্যা মামলার রায় কেন্দ্র করে একটি মহল আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। এই নৈরাজ্য আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে- তা যেন নষ্ট না হয়। গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ কেউ যাতে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে- এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাই। মওলানা ভাসানীর আদর্শ অনুসরণ করে আমরা যেন এই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি। মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বিএনপির ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাসানী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ফেসবুক পোস্ট : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণা সোমবার। এ রায় ঘোষণার আগে পূর্ণ ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত একটি বার্তায় তিনি এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। যেখানে গত বছরে ঢাকায় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতা ও দমনপীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা পূর্ণ ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা দাবি জানাই। ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর আবারও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করবেন।